অভিবাদন প্রধানমন্ত্রীর। (ডান দিকে) ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ভাবনা কান্ত। ছবি: পিটিআই।
পাগড়িটা চোখে পড়ার মতোই। সাদা কুর্তা-পাজামার সঙ্গে গুজরাতের জামনগরের রাজপরিবারের উপহার সেই ‘হালারি’ পাগড়ি পরেই প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সম্মান জানালেন সামরিক বাহিনীকে।
সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজে ছিল অনেক নতুন বিষয়। এই প্রথম জনসমক্ষে এল রাফাল যুদ্ধবিমান। আকাশে দেখাল চক্র প্রদর্শনী। সেইসঙ্গে প্রথম অংশগ্রহণ করলেন বায়ুসেনার দুই মহিলা যুদ্ধবিমান চালক। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা যুদ্ধবিমান চালক ভাবনা কান্ত। বায়ুসেনার মোট ৩৮টি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার অংশ নিয়েছে প্রদর্শনীতে। ছিল সেনার ৪টি বিমানও। ‘লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফট’, ‘লাইট কমব্যাট হেলিকপ্টার’, সুখোই-৩০ এমকেআই বিমান আর রোহিনী রেডারের মডেলে সাজানো ছিল বায়ুসেনার ট্যাবলো। সেনার তরফে টি-৯০ ট্যাঙ্ক ছাড়াও ‘ইনফ্যান্ট্রি কমব্যাট ভেহিকল বিএমপি-২-শরথ’, ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ভ্রাম্যমাণ লঞ্চিং প্যাড, মাল্টিলঞ্চার রকেট সিস্টেম ‘পিনাকা’ ও বৈদ্যুতিন যুদ্ধের সিস্টেম ‘সম্বিজয়’। নৌসেনার প্রদর্শনীতে ছিল বিমানবাহী জাহাজ ‘আইএনএস বিক্রান্ত’-এর মডেল। করোনা অতিমারির কথা মাথায় রেখে সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণকারী দলগুলির সদস্যের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেননি প্রাক্তন সেনা ও বাইক আরোহী ‘ডেয়ারডেভিল’ দল। কুচকাওয়াজের পথের দৈর্ঘ্যও কমানো হয়েছে। লালকেল্লার বদলে জাতীয় স্টেডিয়াম পর্যন্ত প্যারেড করেছে সব দল। তবে ট্যাবলোগুলিকে লালকেল্লা পর্যন্ত আসার অনুমতি দেওয়া হয়।
এ বার প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ সেনার ১২২ জন জওয়ানও। এই প্রথম অন্য কোনও দেশের সেনার সদস্যেরা প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে যোগ দিলেন। অতিমারির প্রকোপেই প্রজাতন্ত্র দিবসে ছিলেন না কোনও বিদেশি অতিথি। নেওয়া হয়েছিল আরও নজিরবিহীন কিছু ব্যবস্থা। কমানো হয়েছে দর্শকের আসন। বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে।
আজ রাজপথে ছিল মোট ৩২টি ট্যাবলো। তার মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ছিল ৬টি। অন্য মন্ত্রক ও আধাসেনার তরফ থেকে পাঠানো হয় ৯টি। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি মিলিয়ে ছিল ১৭টি ট্যাবলো। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পরে এই প্রথম ট্যাবলো পাঠিয়েছে লাদাখ। মৈত্রেয় বুদ্ধের মূর্তি-সহ ওই ট্যাবলোয় ছিল লাদাখের সাংস্কৃতিক জীবনের নানা চিত্র। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সহ অনেকেই উচ্ছ্বসিত উত্তরপ্রদেশের ট্যাবলো দেখে। তাতে ছিল অযোধ্যায় পরিকল্পিত রামমন্দিরের প্রতিকৃতি ও বাল্মিকীর মূর্তি। সেই সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছিল অযোধ্যার ‘দীপোৎসব’। পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলোয় ছিল ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্প।
তবে কেন্দ্রকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলে লাদাখের গলওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনার সঙ্গে লড়াইয়ে নিহত কর্নেল বি সন্তোষ বাবুর বাবা বি উপেন্দ্র জানিয়েছেন, ছেলেকে যে সম্মান দেওয়া হয়েছে তাতে তিনি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। কর্নেল বাবুকে মহাবীর চক্র দিয়েছে সরকার। আজ সংবাদ সংস্থাকে তাঁর বাবা বলেন, ‘‘আমি অখুশি নই। কিন্তু ১০০ শতাংশ সন্তুষ্টও নই। আমার মতে ওর বীরত্বের জন্য পরমবীর চক্র দেওয়া উচিত ছিল।’’