লাল কেল্লায় মৃত নবদীপ সিংহ হুন্ডালের দেহ ঘিরে বসে কৃষকেরা। ছবি: রয়টার্স।
সামনে ‘প্রভাত ভেরি’ করতে করতে চলেছেন শিখেরা। পিছনে গুরু তেগ বাহাদুরের চারশোতম প্রকাশ পর্ব উপলক্ষে সাজানো পঞ্জাবের ট্যাবলোয় দিল্লির রকাবগঞ্জ গুরুদ্বার। দু’পাশে নীল আঙরাখা, অস্ত্র নিয়ে শিখ যোদ্ধা সম্প্রদায় নিহঙ্গ শিখদের সাজে নাচতে নাচতে চলেছেন শিল্পীরা।
দিল্লির রাজপথে প্রজাতন্ত্র দিবসের সরকারি কুচকাওয়াজে যখন এই দৃশ্য, তখন দিল্লির সীমানায় ঘোড়সওয়ার নিহঙ্গ শিখেরাই প্রথম পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেললেন। কৃষকদের ট্র্যাক্টর নিয়ে কুচকাওয়াজে প্রথম সারিতে ছিলেন এই নিহঙ্গ শিখেরাই। গুরু গোবিন্দ সিংহ যখন যুদ্ধ অভিযানে যেতেন, তখন সকলের আগে শিখ পতাকা বহন করে এগিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব থাকত এই নিহঙ্গ শিখদের উপরেই।
রাজপথে পঞ্জাবের ট্যাবলোর উপরে পতপত করে শিখদের ধর্মীয় পতাকা ‘নিশান সাহিব’ উড়ছিল। শিখদের জীবনের মন্ত্র, প্রবল আশাবাদের প্রতীক। কৃষক আন্দোলনকারীদের একাংশ যখন লালকেল্লায় ঢুকে পড়লেন, তখন সেই আন্দোলনকারীরাই লালকেল্লার প্রাচীর থেকে উড়িয়ে দিলেন ‘নিশান সাহিব’। অভিযোগ উঠল, জাতীয় পতাকার অসম্মান হয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্মারকে ধর্মীয় পতাকা ওড়ানো হয়েছে।
গাজিপুরে আন্দোলনরত কৃষকদের উপর লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস পুলিশের। ছবি: পিটিআই।
দিনটা শুরু হয়েছিল ইন্ডিয়া গেটের সামনে কুচকাওয়াজ দিয়ে। দিনের শেষে কৃষকদের লাখো ট্র্যাক্টরের কুচকাওয়াজই জাতীয় স্তরে বিতর্কের কেন্দ্রে। ফেসবুক-টুইটারে লালকেল্লায় বাসন্তী রঙের শিখ ধর্মের পতাকা নিয়ে তুমুল বাকবিতণ্ডায় পাল্টা প্রশ্ন উঠেছে, রাজপথে উত্তরপ্রদেশের রামমন্দিরের আদলে ট্যাবলো কি ধর্মনিরপেক্ষতার নমুনা?
রাজপথে কুচকাওয়াজের সাক্ষী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকদের আন্দোলন শুরুর পরে তিনি একদিন আচমকাই গুরু তেগ বাহাদুরকে শ্রদ্ধা জানাতে রকাবগঞ্জ গুরুদ্বারে পৌঁছে গিয়েছিলেন। এই গুরুদ্বারেই গুরু তেগবাহাদুরের শেষকৃত্য হয়েছিল।
ট্রাক দিয়ে তৈরি ব্যারিকেড সরানোর চেষ্টা কৃষকদের। ছবি: পিটিআই।
আজ কৃষক আন্দোলন থেকে বারবার শিখ গুরুদের নামে জয়ধ্বনি উঠেছে। আন্দোলনকারী কৃষক নেতারা গত দু’মাসে বারবার বলেছেন, মোদী সরকার জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলতে যে সেনাবাহিনীর জয়ধ্বনি দেয়, সেই সেনা জওয়ানদের বাবা-মা, তাঁদের কৃষক পরিবারের লোকেরাই তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দিল্লির সীমানায় খোলা সড়কে বসে রয়েছেন। কৃষকদের ট্র্যাক্টর মিছিলের সঙ্গে রাস্তায় হাঁটতে থাকা আন্দোলনকারীদের সামনে এ দিন আইটিবিপি-র ট্রাক চলে আসতেই স্লোগান উঠেছে, ‘জয় জওয়ান, জয় কিসান’।
পুলিশের সঙ্গে কৃষকের সংঘর্ষ। গাজিপুর সীমানায়। ছবি: পিটিআই।
দিল্লি পুলিশের ভয় ছিল, দিল্লিতে ট্র্যাক্টর মিছিলের অনুমতি দিলে আন্দোলনকারীরা রাজপথে সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করবেন। লাগামছাড়া কৃষকরা এ দিন লালকেল্লায় হানা দিলেও রাজপথের কুচকাওয়াজের দিকে এগোননি। কৃষক নেতারা বলেছিলেন, রাজপথে সেনা জওয়ানরা তো পঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষক পরিবরেরই সন্তান। রাজপথের কুচকাওয়াজের একেবারে শেষে একটি রাফাল যুদ্ধবিমান উড়ে এসে খাড়া আকাশের দিকে উড়ে গেল, তখন ঘোষণা হল, পাইলটের আসনে বসে পঞ্জাব-হরিয়ানার সীমানার অম্বালায় বায়ুসেনার ১৭ স্কোয়াড্রনের কমান্ডিং অফিসার, গ্রুপ ক্যাপ্টেন হরকিরত সিংহ।