প্রতীকী ছবি।
নরেন্দ্র মোদী সরকার মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর থেকে বাড়িয়ে ২১ বছর করার সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে দাবি করলেও এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করল। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী থেকে বিরোধী শিবিরের একাংশের মতে, বাস্তবে মেয়েদের উপকার ও ক্ষমতায়ন কতটা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়, মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে ছেলেদের মতোই ২১ বছর করা হবে। কেন্দ্রের সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী আজ সংসদে জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহেই বাল্য বিবাহ নিষিদ্ধকরণ আইনে সংশোধনী পেশ করা হবে। সরকারি সূত্রের খবর, বাল্য বিবাহ নিষিদ্ধকরণ আইনের সঙ্গে হিন্দু, মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মের যে সব বিবাহ আইন রয়েছে, সেখানেও একই ভাবে সংশোধন হবে।
মুসলিম সাংসদরা আজ আপত্তি তুলে বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার মুসলিমদের ব্যক্তিগত আইনে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে। ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন অব মুসলিম লিগের সাংসদ আবদুল ওয়াহাব রাজ্যসভায় মুলতুবি প্রস্তাব আনেন। বিজেপি নেতারা অবশ্য মনে করছেন, মুসলিম নেতাদের একাংশ এর আগে তিন তালাক নিষিদ্ধ করার বিলেও আপত্তি তুলেছিলেন। সে বারের মতো এ ক্ষেত্রেও বিজেপি আখেরে মুসলিম মহিলাদের ভোট পাবে। সিপিএমের পলিটব্যুরো নেত্রী বৃন্দা কারাট বলেন, ‘‘এখানে ব্যক্তি আইনের কোনও বিষয় নেই। আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে পারি না। কারণ, ১৮ বছরেই যখন কেউ সাবালক হচ্ছেন, তখন ১৮ বছর বয়সে তাঁর বিয়ের অধিকার থাকবে না কেন?’’ বৃন্দার মতে, সরকার যদি কারণ হিসেবে মেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধি, অপুষ্টির সমস্যা, শিক্ষার প্রয়োজনের কথা বলে, তার জন্য বিয়ের বয়স না বাড়িয়ে অপুষ্টির সমস্যার সমাধান করা উচিত। অথচ রক্তাল্পতা, মেয়েদের অপুষ্টির হার ক্রমশ বাড়ছে। মেয়েদের স্কুল শিক্ষার দিকে নজর দেওয়া উচিত।
সমাজবাদী পার্টির দুই নেতা আবার নতুন বিতর্ক বাধিয়ে বসেছেন। দলের সাংসদ সৈয়দ তুফাইল হাসান বলেন, ‘‘১৬-১৭ বছর বয়স থেকেই মেয়েরা সন্তানের জন্ম দিতে পারে। এই সময়টা ৩০ বছর পর্যন্ত ধরা হয়। তাই মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬ করারই প্রস্তাব ছিল।’’ তাঁর যুক্তি, বয়সে বিয়ে হলে দু’টি সমস্যা। এক, মা হওয়ার জটিলতা। দ্বিতীয় সমস্যা, বাবা-মায়ের অনেক বয়স হয়ে গেলেও সন্তানের প্রতিষ্ঠিত না হতে পারা। দলের আর এক সাংসদ শফিকুর রহমান বার্কের মন্তব্য, ‘‘ভারতের মতো গরিব দেশে সবাই মেয়েকে কম বয়সে বিয়ে দিতে চান। ফলে এই বিলকে সমর্থন করা সম্ভব নয়।’’ এসপি নেতা অখিলেশ যাদব জানিয়েছেন, সাংসদদের এমন বক্তব্য দল মেনে নিচ্ছে না।
বাল্য বিবাহ আইনে রদবদল করলেই তা কার্যকর করা যাবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এর অপব্যবহার নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মধু মেহরার মতে, কোনও মেয়ে কারও সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ আইন প্রয়োগ করে ছেলেটির বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করা হয়েছে। ভিন্ন জাত বা ধর্মের বিয়েতে এই ধরনের ঘটনা বার বার ঘটছে। এখন মেয়েদের জন্য ২১ বছর পর্যন্ত সেই ঝুঁকি থাকছে। বৃন্দা জানান, বাল্য বিবাহ বন্ধ করার আইন থাকলেও তা বন্ধ করা যায়নি। আইন রূপায়ণের উপর নজর দেওয়া উচিত।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের একাংশ মনে করাচ্ছেন, আইন কমিশন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ছেলে ও মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স একই করার সুপারিশ করেছিল। ভারতে বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলেদের থেকে মেয়েদের বয়স কম হয় বলে এত দিন সেটা ২১ বছর ও ১৮ বছর ছিল। সরকারের যদি সমতাই লক্ষ্য হয়, তা হলে ছেলেদের বিয়ের ন্যূনতম বয়সও কমিয়ে ১৮ বছর করা উচিত। একই ব্যক্তি ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে ১৮ বছর বয়সে সাবালক হয়ে উঠছেন অথচ বিয়ের ক্ষেত্রে ২১ বছর পর্যন্ত নাবালক থাকছেন, তা হতে পারে না।