উত্তরাখণ্ডে সম্প্রতি ক্ষতিগ্রস্ত তপোবন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ফাইল ছবি।
উত্তরাখণ্ডের সাম্প্রতিক প্লাবনে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে বছর দুয়েক আগে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এক বৈঠকে প্রশ্ন উঠেছিল বলে জানিয়েছে একটি সংবাদমাধ্যম। তাদের দাবি, দু’টি প্রকল্পের অর্ধেকের বেশি কাজ হয়ে যাওয়ায় সেগুলি শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উত্তরাখণ্ডে ২০১৩ সালের বন্যার পরেই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই মামলায় এখনও মীমাংসা হয়নি। কারণ, পরিবেশ, জলসম্পদ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রক আদালতে একসঙ্গে বক্তব্য জানাতে পারেনি। উল্টে ২০১৬ সালে পরিবেশ মন্ত্রক গঙ্গার একটি অংশে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ায় সায় দিয়ে হলফনামা দেয়। এর বিরোধিতা করেন তৎকালীন জলসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতী। তিনি জানান, পরিবেশ মন্ত্রক পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন প্রিন্সিপ্যাল সচিব নৃপেন্দ্র মিশ্রের নেতৃত্বে তিন মন্ত্রক ও উত্তরাখণ্ড সরকারের প্রতিনিধি বৈঠকে বসেন। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, ওই বৈঠকে উত্তরাখণ্ডে গঙ্গা ও তার শাখানদীর উপরে নতুন বিদ্যুৎপ্রকল্পে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। যে সব প্রকল্পের কাজ অর্ধেকের কম হয়েছে সেগুলিও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে ১৩টি নির্মীয়মাণ প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল তার মধ্যে রয়েছে ধৌলিগঙ্গার উপরে তপোবন-বিষ্ণুগড় ও অলকানন্দার উপরে পিপলকোট। সাম্প্রতিক প্লাবনে এই দু’টি প্রকল্পই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এই দুটি প্রকল্পের অর্ধেকের বেশি কাজ হয়ে গিয়েছিল বলে কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি বেআইনি বালি খাদান ও পাথর ভাঙা রুখতে কড়া সুপারিশ করা হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্তগুলি সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হয়নি।
উত্তরাখণ্ড সরকার এর বিরোধিতা করে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বৈঠকের তিন সপ্তাহের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিংহ রাওয়ত খোদ নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লেখেন। তাতে তিনি জানান, রাজ্যের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো ও প্রত্যন্ত এলাকায় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু ২০১৩ সালে জারি করা সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা ও ‘ভাগীরথী ইকো-সেনসিটিভ জ়োন’ তৈরি হওয়ার ফলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বড় ধাক্কা খেয়েছে। এ নিয়ে মোদীর সাহায্য চান তিনি।
এই বিষয়ে নৃপেন্দ্র মিশ্র ও উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর মন্তব্য করতে চাননি। রাজ্য জলবিদ্যুৎ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সন্দীপ সিঙ্ঘলের দাবি, ‘‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে হওয়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনে কোনও নতুন প্রকল্প শুরু করিনি।’’
অন্য দিকে তপোবন প্রকল্পে মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ শুরু করেছে এনটিপিসি। গত কাল মৃত কর্মী নরেন্দ্রজি-র স্ত্রী বিমলা দেবীর হাতে ২০ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন এনটিপিসি কর্তারা। রাজ্য সরকারের প্রকাশিত তালিকা দেখেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।