প্রতীকী ছবি।
আইএএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে এ বার সরাসরি ধর্মনিরপেক্ষতার ‘সমস্যা’ নিয়ে প্রশ্ন।
শনিবার শুরু হয়েছে ভবিষ্যৎ আমলা বা আইএএস বাছাইয়ের জন্য ইউপিএসসি-র সিভিল সার্ভিসের মূল পরীক্ষা। তাতে জেনারেল স্টাডিজ-এর পরীক্ষার প্রথম পত্রে প্রশ্ন এসেছে, ‘আমাদের সাংস্কৃতিক প্রথাগুলির সামনে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?’ দেড়শো শব্দে জবাব দিতে বলা হয়েছিল।
অবসরপ্রাপ্ত আমলারা বলছেন, সিভিল সার্ভিসে এই ধরনের প্রশ্ন ‘অস্বাভাবিক’। অভিযোগ, আইএএস বাছাইয়ের আগে দেখে নেওয়া হচ্ছে, সঙ্ঘ-পরিবারের মতাদর্শে সহমত কারা। কারণ, সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি দেশের ‘সাংস্কৃতিক প্রথার বিরোধী’— সঙ্ঘের সেই মতাদর্শের ইঙ্গিতই এই প্রশ্নে দৃশ্যত ফুটে উঠেছে।
অবসরপ্রাপ্ত আইএএস, প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও জহর সরকারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই প্রশ্নের ইঙ্গিতটিই হল, ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের সংস্কৃতির পরিপন্থী। ঘোর নিন্দনীয়। চরম সীমাটিও পেরিয়ে যাচ্ছে। এই প্রশ্ন সংবিধানের বিরোধী। সাধারণত এই ধরনের প্রশ্নের বিরুদ্ধে আদালতে গেলে বিহিত পাওয়া যেত। এখন কী হবে, তা জানি না।’’
এই সেই বিতর্কিত প্রশ্নপত্র। ছবি: টুইটার থেকে।
কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পরে ইস্তফা দিয়ে আইএএস অফিসার কান্নান গোপীনাথন বলেছিলেন, ‘আমার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।’ ওই প্রশ্ন দেখে সেই কান্নান আজ বলেছেন, ‘‘আমার উত্তরের প্রথম বাক্য হত— ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা ইতিবাচক ধারণা, যা সমস্ত সাংস্কৃতিক প্রথাকেই সঙ্গে নিয়ে চলে, উৎসাহ দেয়, একই সঙ্গে কুসংস্কার ও কুপ্রথার বিরুদ্ধে বিজ্ঞানসম্মত চিন্তাভাবনা তৈরি করে।’’
শাসক শিবিরের যুক্তি, ইউপিএসসি স্বাধীন ভাবে প্রশ্নপত্র তৈরি করে। তাতে সরকারের হাত নেই। বিজেপি সূত্র বলছে, সকলেই এই প্রশ্নের সমালোচনা করেননি। রাজস্থান ক্যাডারের আইএএস অফিসার সঞ্জয় দীক্ষিত যেমন বলেন, ‘‘সময় বদলাচ্ছে। এই প্রশ্ন কৌতূহল-উদ্দীপক, বাস্তব।’’ দিল্লির এক ইউপিএসসি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান জানাচ্ছেন— এ বার আরও কয়েকটি প্রশ্নে অচেনা সুর বেজেছে। জেনারেল স্টাডিজ-এই যেমন প্রশ্ন হয়েছে, নিজস্ব সংস্কৃতি ধরে রাখতে ভারতীয় সমাজ কী ভাবে অনন্য? একটি রচনার বিষয় ছিল, ‘পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদমাধ্যম দেশের গণতন্ত্রের বিপদ’।
ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিসের মূল পরীক্ষার ভিত্তিতেই ঠিক হয়, কে কোন শাখায়, কোন রাজ্যের ক্যাডারে কাজ করবেন। গত বছর প্রধানমন্ত্রীর দফতর বিভিন্ন মন্ত্রকের কাছে জানতে চেয়েছিল, আইএএস বাছাইয়ের পরে তিন মাসের ফাউন্ডেশন কোর্সের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কি না। রাহুল গাঁধী অভিযোগ করেছিলেন, সঙ্ঘের পছন্দের লোক নিয়োগ করতে চাইছেন মোদী। সঙ্ঘ অনুগত সংস্থা ‘সঙ্কল্প’ ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করার পরেও একই অভিযোগ ওঠে। আরএসএস-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ গোপাল ওই সংস্থার অন্যতম ‘মেন্টর’। অবসরপ্রাপ্ত আইএএস, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেন বলেন, ‘‘এঁরা আসলে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিপদ হিসেবে দেখছেন। সংবিধানের মূল নীতি ধর্মনিরপেক্ষতা হওয়ায় সংবিধানও এঁদের কাছে বিপদ।’’