himachal pradesh

হিমাচলের হারে কি অনুরাগের ছোঁয়া

হিমাচলের জয় বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে কংগ্রেসকে। দলের বক্তব্য, বিজেপি দেখাতে চাইছে হিমাচলে প্রধানমন্ত্রী সে ভাবে প্রচারে যাননি বলেই ওই হার।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী, অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৪৯
Share:

হিমাচলে জয় কংগ্রেসের। ছবি পিটিআই।

গুজরাতে বিজেপির বিপুল জয়ে চোনা ফেলে দিয়েছে হিমাচল প্রদেশের হার। অথচ, গোড়া থেকেই বিজেপি নিশ্চিত ছিল উত্তরাখণ্ডের মতো পাহাড়ের আর এক রাজ্য হিমাচলে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে দল। কিন্তু হিমাচলে অপ্রত্যাশিত হার দলের মধ্যেই নানা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। তেমনই কংগ্রেস শিবিরের দাবি, ওই রাজ্যে যে ক’টি বিধানসভা কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী প্রচারে গিয়েছিলেন সর্বত্র বিজেপি প্রার্থীরা হেরে গিয়েছেন। যা থেকে প্রমাণিত, মোদী ম্যাজিক বলে কিছু হয় না। মানুষ চাইলে মোদীকেও হার মানতে হয়।

Advertisement

প্রাথমিক বিশ্লেষণে ওই রাজ্যে হারের পিছনে দলীয় কোন্দল, আত্মতুষ্টি, সমন্বয়হীনতা ও প্রার্থী বাছাই নিয়ে গন্ডগোলকে দায়ী করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সমালোচনার মুখে ওই রাজ্যের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের ভূমিকা। বিজেপি সূত্রের একাংশের মতে, পিতা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রেমকুমার ধুমল টিকিট না পাওয়ায় অনুরাগ গোড়া থেকেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপরে ক্ষুব্ধ ছিলেন। পরবর্তী সময়ে প্রচারেও গা-ছাড়া ছিলেন তিনি। যার ফলে তাঁর লোকসভা কেন্দ্র হামিরপুরে ৫টি আসনের একটিতেও জিততে পারেনি বিজেপি। গত কাল হিমাচলপ্রদেশে হারের পরেই সমাজমাধ্যমে অনুরাগের ভূমিকা নিয়ে কাঁটাছেড়া শুরু হয়ে যায়। তদ্বির করা সত্ত্বেও পিতা ধুমল টিকিট না পাওয়ায় যে ভাবে প্রকাশ্যে চোখের জল ফেলেছিলেন অনুরাগ, সেই ছবিও ভাইরাল হয়।

গোড়া থেকেই ওই রাজ্যে বিজেপির বিক্ষুব্ধদের সমর্থনের অভিযোগ রয়েছে অনুরাগের বিরুদ্ধে। এঁদের মধ্যে দু’জন জেতেন। কিন্তু একাধিক আসনে বিক্ষুব্ধ প্রার্থীরা দলের ভোট কেটে কংগ্রেসের সুবিধা করে দেন। দলীয় সূত্রের মতে, হারের কারণ বিশ্লেষণে অনুরাগের ভূমিকাও আতস কাচের নীচে থাকবে। পাল্টা যুক্তি হল— একা অনুরাগের কারণে বিজেপি হেরে গিয়েছে, এমন ভাবাও ঠিক নয়। কারণ কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচারমন্ত্রী অনুরাগের সামনে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন পড়ে রয়েছে। তাই ঘর শত্রু বিভীষণ হয়ে মোদীর কোপে পড়ার মতো ভুল অনুরাগ করবেন কি না, সেই প্রশ্ন রয়েছে। কংগ্রেস নেতা গৌরব পান্ধী অবশ্য বিতর্ক উস্কে বলেন, “হিমাচলে বিজেপির হারের পিছনে অনুরাগ একটি কারণ। অনুরাগের মন্তব্য ‘গোলি মারো’-র জবাব হল ভারত জোড়ো যাত্রা। রাহুল গান্ধীর ওই যাত্রার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে হিমাচলেও।”

Advertisement

নরেন্দ্র মোদীর জন্য যেমন গুজরাত, তেমনই হিমাচলে জয়লাভ করা ছিল বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার কাছে সম্মানের লড়াই। দলের বিশ্লেষণ, ওই রাজ্যে নড্ডা ছাড়াও ক্ষমতার আরও দু’টি কেন্দ্র ছিল। অনুরাগ ঠাকুর ও সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর শিবিরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল গোড়া থেকেই। দুই শিবিরের নেতাদের পাশে বসিয়ে দলের স্বার্থে একজোটে কাজে নামার প্রশ্নে নড্ডার কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। সমন্বয়হীনতার সেই প্রভাব পড়ে ভোটের বাক্সে। তা ছাড়া দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে ‘জিতে যাব’ ধরে নিয়ে আত্মতুষ্টি, যথেষ্ট আলোচনা না করে প্রায় কুড়ি জন জেতা বিধায়ককে বদলে নতুনদের টিকিট দেওয়া, কংগ্রেস থেকে আসা প্রার্থীদের টিকিট দেওয়ায় প্রাধান্য ভাল ভাবে নেননি দলের একটি অংশ। বসে যান তাঁরা।

হিমাচলের জয় বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে কংগ্রেসকে। দলের বক্তব্য, বিজেপি দেখাতে চাইছে হিমাচলে প্রধানমন্ত্রী সে ভাবে প্রচারে যাননি বলেই ওই হার। কিন্তু পরিসংখ্যান বলেছে, ওই রাজ্যে দশটি জনসভা করেছেন মোদী। কিন্তু সেই বিধানসভাগুলির একটিতেও জিততে পারেনি বিজেপি। পান্ধীর দাবি, প্রধানমন্ত্রীকে হিমাচলে আলাদা করে প্রচারের সুযোগ করে দিতে হিমাচল ও গুজরাতে আলাদা সময়ে ভোট হয়। তা সত্ত্বেও ওই হার থেকে প্রমাণ, মোদী ম্যাজিক বলে কিছু হয় না। দলের সর্বভারতীয় সভাপতির রাজ্যে মোদী সর্বশক্তি দিয়ে প্রচার করলেও, হার হয়েছে বিজেপির।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement