সংসদের বাইরে কংগ্রেস সাংসদদের বিক্ষোভ। —ফাইল চিত্র
রঙের উৎসবের পরে বুধবার ফের খুলছে সংসদের দরজা। তার পরেই দিল্লির সংঘর্ষ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। যে ঘটনায় কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধীরা লোকসভায় তুমুল বিক্ষোভ দেখিয়েছে। সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা দলীয় নেতৃত্বকে দেওয়া রিপোর্টে দাবি করেছেন, দিল্লির সংঘর্ষ হয়েছে ২০০২-এর গুজরাত-দাঙ্গার আদলে। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং সরকারের প্রচ্ছন্ন মদতে। এ নিয়ে সংসদে দ্রুত আলোচনার দাবি তুলে সরব হয়েছিল তৃণমূলও। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ রাতারাতি রাজনৈতিক পাশা উল্টে যাওয়ায় এখন কংগ্রেস কতটা আগ্রাসী হতে পারবে কিংবা বিরোধীরা একজোট হয়ে সরকারকে বিঁধতে পারবে, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দিল্লির হাওয়ায়।
দিল্লির সাম্প্রতিক সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে। সংঘর্ষের সময় অমিত শাহের অধীনস্থ দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। বিরোধীদের অভিযোগ, দেশের রাজধানীতে এত বড় মাপের সংঘর্ষ হয়েছে বিজেপি নেতাদের উস্কানিতেই। দিল্লি ভোটের আগে থেকেই শাহিন বাগ, জামিয়াকে নিশানা করে লাগাতার উস্কানিমূলক বিবৃতি দিয়েছেন অনুরাগ ঠাকুর, কপিল মিশ্র-সহ বিজেপি নেতারা। নেতা-মন্ত্রীদের সভায় ও মিছিলে স্লোগান উঠেছে, “দেশ কে গদ্দারো কো, গোলি মারো শালো কো!”
দিল্লির হিংসা কবলিত এলাকা ঘুরে কংগ্রেস প্রতিনিধি দল জানিয়েছে, ২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদী মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন গুজরাতে যে ভাবে হিংসা ছড়ানো হয়েছিল, সে ভাবেই দিল্লিতে হিংসা ছড়ানো হয়েছে। নিষ্ক্রিয় থেকেছে অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন দিল্লি পুলিশ। মুখে কুলুপ এঁটেছিল অরবিন্দ কেজরীবালের সরকারও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের সময়ে ইচ্ছাকৃত ভাবেই এই ‘ষড়যন্ত্র’ করা হয়েছে বলেও রিপোর্টে অভিযোগ। হিংসা ছড়ানোর পরিকল্পনার মধ্যে ‘গুজরাত মডেলের’ ছায়া দেখেছে ওই রিপোর্ট। কংগ্রেস নেতা মুকুল ওয়াসনিকের অভিযোগ, দিল্লি-সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে ছ’শোর বেশি এফআইআর হলেও অনুরাগ ঠাকুর, কপিল মিশ্রর মতো বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে তা দায়ের হয়নি।
বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, দিল্লিতে হিংসা ছড়িয়েছিল সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার উস্কানিতে। সংসদে সিএএ পাশের তিন দিনের মাথায় রামলীলা ময়দানে ‘এসপার-ওসপার’ লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন তাঁরা। তার উপরে হোলির ঠিক আগে এক কাশ্মীরি দম্পতিকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশের দাবি, আইএস-এর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দিল্লিতে সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলন ছড়ানো হচ্ছিল। বিজেপির দাবি, দিল্লির সংঘর্ষ পূর্ব পরিকল্পিত।
এই অবস্থায় এ নিয়ে উত্তপ্ত হওয়ার কথা সংসদ। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দলত্যাগ এবং ২২ জন বিধায়কের পদত্যাগে সে রাজ্যে কংগ্রেস ব্যাকফুটে। এই অবস্থায় তারা ঘর সামলে কতটা আক্রমণে নামতে পারবে, সে দিকে নজর থাকবে অনেকের। তৃণমূল এবং আপের দিকেও চোখ থাকবে।