কোয়াড বৈঠকে ভার্চুয়াল উপস্থিতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।
পাইকারি হারে কোভিডের প্রতিষেধক বানানোর জন্য টাকা দেবে জাপান এবং আমেরিকা। সংশ্লিষ্ট প্রতিষেধকটি হবে আমেরিকায় আবিষ্কৃত কোনও প্রতিষেধক। তার বিপুল উৎপাদন হবে ভারতে। কোল্ড চেন-সহ বিভিন্ন সহায়ক প্রযুক্তি ও পরিকাঠামো দেবে অস্ট্রেলিয়া। সেই প্রতিষেধক রফতানি হবে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলিতে।
এক অভিনব উদ্যোগ নিঃসন্দেহে। গত কাল আমেরিকা, ভারত, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার ‘কোয়াড’ বৈঠকের পরে এই সিদ্ধান্তে ঘরে-বাইরে নড়াচড়া শুরু হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস অবশ্য প্রশ্ন তুলেছে, এর নিট ফল কী? ভারতবাসী এই উদ্যোগে কতটা উপকৃত হবে, তা-ও স্পষ্ট নয়। বরং গত কাল কিছুটা সাবধানতার সুরে বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, ‘‘এই উৎপাদনের ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ সরবরাহ কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।’’
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এই উদ্যোগটি ভারতের জন্য এই সময়ে খুবই প্রয়োজনীয় ছিল। বস্তুত, ভারতই এর জন্য গত এক মাস ধরে লাগাতার দৌত্য করে এসেছে কোয়াডভুক্ত অন্য দেশগুলির সঙ্গে। দাবি করা হচ্ছে, এর ফলে এক দিকে কূটনৈতিক ভাবে লাভবান হবে মোদী সরকার। চিনের সঙ্গে প্রতিষেধক-কূটনীতিতে পাল্লা দেওয়া সম্ভব হবে। এটা ঘটনা যে, চিন দ্রুত গতিতে আফ্রিকা এবং পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তাদের প্রতিষেধক রফতানি করছে। যে-হেতু তাদের আর্থিক জোর বেশি, বিনামূল্যে অনুদান হিসেবে দেওয়ার পরিমাণটাও বেশি। বিষয়টি তুলে ধরে আমেরিকা, জাপানের মতো দেশগুলিকে পাশে থাকতে বলে ভারত। যে-হেতু ভারতের প্রতিষেধক উৎপাদনের পরিকাঠামো, সরঞ্জাম এবং অন্য সুবিধাগুলি বেশি, তাই কোয়াডের প্রতিষেধক উৎপাদনের কেন্দ্র ভারত হোক, এমনটাই আর্জি জানিয়েছিল সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, তাতে সাড়া দিয়েছে সংশ্লিষ্ট সব দেশ।
কোয়াডের চিন-বিরোধিতার স্বরকে এ ভাবেই কাজে লাগানোতে ভারতের আরও একটি সুবিধে হতে চলেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। সেটি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের দিক। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান বড় মাপের আর্থিক বিনিয়োগ ও পরিকাঠামো তৈরি করলে তাতে আখেরে লাভ ভারত এবং ভারতবাসীর। দেশের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক তৈরির কাজ তো চলছেই। কিন্তু এই ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ এলে স্বাভাবিক ভাবেই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ক্ষেত্রে প্রবল চাপে থাকা মোদী সরকার গোটা বিষয়টিকে নিয়ে ঘরে ও বাইরে প্রচার করতে পারবে।