প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নী। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। নিজস্ব চিত্র
ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ নিজেই ঘোষণা করেছেন, তিনি কংগ্রেস ছাড়ছেন। তাঁর সঙ্গে কংগ্রেসের আরও বেশ কিছু সাংসদ-বিধায়ক দল ছাড়তে চলেছেন। তাঁদের মধ্যে মনমোহন জমানার দু’এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও থাকতে পারেন বলে কংগ্রেসের অন্দরমহলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দু’দিন সকলের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার পরে বৃহস্পতিবার নভজ্যোৎ সিংহ সিধু চণ্ডীগড়ে মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নীর সঙ্গে বৈঠক করেন। চন্নী আজ দিল্লিতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে পঞ্জাবের দাবিদাওয়া নিয়ে বৈঠক করেছেন। তিনি রাহুল গাঁধীর সঙ্গেও সিধুর ক্ষোভ নিয়ে বৈঠক করবেন বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। কিন্তু অমরেন্দ্র যদি পঞ্জাবের কংগ্রেসে ধস নামিয়ে দেন, তা হলে আসন্ন বিধানসভা ভোটে দলের ক্ষমতায় ফেরা কঠিন হয়ে উঠবে বলে কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন।
সূত্রের খবর, অমরেন্দ্র কৃষি আইন প্রত্যাহার নিয়ে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা করেছিলেন। কেন্দ্রের কাছ থেকে কৃষকদের দাবিদাওয়া সংক্রান্ত কিছু আদায় করতে পারলে কৃষকদের বিষয়টিকে সামনে রেখেই নতুন আঞ্চলিক দল গড়বেন তিনি। ভোটের পরে বিজেপির সঙ্গে আসন সমঝোতায় যাওয়ার রাস্তাও খোলা থাকবে। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের একাংশ চাইছেন, অমরেন্দ্রকে ধরে রাখার চেষ্টা করা দরকার। এত দিন কমল নাথ ও অম্বিকা সোনি অমরেন্দ্রর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। আজ কমল নাথ ও দিল্লির শিখ নেতা অরবিন্দ্র সিংহ লাভলি দশ জনপথে গিয়ে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
সিধুকে পঞ্জাবের সভাপতির পদে রেখে দিয়ে অমরেন্দ্রকে দলে ধরে রাখা সম্ভব কি না, তা নিয়ে অবশ্য কংগ্রেসের মধ্যে সংশয় রয়েছে। সূত্রের খবর, কংগ্রেস নেতৃত্ব সিধুকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদে রেখে দিতে চাইছেন। তাতে সাংসদ মণীশ তিওয়ারি, প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি সুনীল জাখরের মতো অনেক নেতারই প্রবল আপত্তি রয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস হাই কমান্ড মনে করছে, সিধুকে সরানো হলে রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা তাঁকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে বসানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। তার বদলে সিধুকেই নিজে থেকে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করতে বলা হবে। তবে পদ থেকে সরানো না হলেও, সিধুর চাপের কাছে আর ভবিষ্যতে মাথা নোয়ানো হবে না বলেই কংগ্রেস নেতাদের দাবি। গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক নেতার বক্তব্য, ‘‘সিধু প্রদেশ সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে নিজের পায়ে কুড়ুল মেরেছেন। নিজেকে অস্থিরমতি বলে প্রমাণ করেছেন। তিনি কংগ্রেস ছাড়লেও তাঁকে আম আদমি পার্টি দলে নিতে চাইবে না।’’
কংগ্রেসের অন্দরমহলে প্রশ্ন, সিধুর মতো অস্থিরমতি নেতাকে প্রদেশ সভাপতির পদে রেখে হাই কমান্ডই বা কেন ভোটে যেতে চাইছে? সিধুর দাবি ছিল, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত নেতাদের মন্ত্রিসভা থেকে সরাতে হবে। পুলিশের ডিজি ও অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে মুখ্যমন্ত্রী চন্নী যাঁদের নিয়োগ করেছেন, তাঁরা ধর্মগ্রন্থ অবমাননায় অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁদের সরাতে হবে। চন্নী এই বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। তবে শিখদের বার্তা দিয়ে ধর্মগ্রন্থ অবমাননার মামলা লড়তে বিশেষ এক জন আইনজীবীকে নিয়োগ করেছেন। মন্ত্রিসভায় বারবার বদলে তিনি ইচ্ছুক নন বলে সুকৌশলে জানিয়ে দিয়েছেন চন্নী।
এআইসিসি-তে পঞ্জাবের ভারপ্রাপ্ত নেতা হরিশ রাওয়ত শনিবারই চণ্ডীগড়ে যাচ্ছেন। পঞ্জাবে সরকার ও দলের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন হবে। উত্তরাখণ্ডের নেতা রাওয়ত নিজেই পঞ্জাবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে নিজের রাজ্যের ভোটে মন দিতে চাইছেন। সূত্রের খবর, রাহুলের আস্থাভাজন, রাজস্থানের নেতা হরিশ চৌধরিকে পঞ্জাবের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।