পূর্ব অমৃতসর থেকে ভোটে লড়ছেন সিধু। তাঁর বিরুদ্ধে শিরোমণি অকালি দলের প্রধান সুখবীর সিংহ বাদল নিজের শ্যালক বিক্রম সিংহ মাঝিথিয়াকে প্রার্থী করেছেন।
ফাইল চিত্র।
‘সিধু তেরি বল্লে বল্লে’, ‘সিধু তেরি বল্লে বল্লে’!
মেরুন পাগড়ি, মেরুন কুর্তা, তার উপরে মেরুন বাহারি শাল। মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে তিনি মঞ্চে ওঠেন। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সামনের ভিড়ের উদ্দেশে চুমু উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘আই লাভ ইউ!’
এ ভাবে দেশের আর কোনও রাজনৈতিক নেতা বক্তৃতা শুরু করেন?
প্রশ্ন শুনে অমৃতসরের ভোটের প্রচারের ময়দান থেকে কপিল শর্মার কমেডি শো-এর মেজাজে ফিরে যান নভজ্যোৎ সিংহ সিধু। স্বভাব রসিকের উত্তর আসে, “আরে ও জওয়ানি ক্যায়সা, জিস জওয়ানি মে জোশ না হো!”
সত্যিই ‘জোশ’ দেখলে কে বলবে, নভজ্যোৎ সিংহ সিধুর বয়স আটান্ন ছুঁয়েছে! যেন এখনই পঞ্জাবের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ব্যাট হাতে ওপেন করতে নামবেন। শেন ওয়ার্ন এলেই ‘শেরি’-র মেজাজে স্টেপ-আউট করে ছক্কা মারবেন।
পূর্ব অমৃতসর থেকে ভোটে লড়ছেন সিধু। তাঁর বিরুদ্ধে শিরোমণি অকালি দলের প্রধান সুখবীর সিংহ বাদল নিজের শ্যালক বিক্রম সিংহ মাঝিথিয়াকে প্রার্থী করেছেন। সিধুর অভিযোগ, মাঝিথিয়াই পঞ্জাবে ড্রাগের কারবারের আসল মাথা। আর মাঝিথিয়ার পাল্টা চ্যালেঞ্জ, তিনিই এ বার সিধুকে ভোটে হারাবেন। উল্টো দিকে আম আদমি পার্টি সিধুর বিরুদ্ধে পঞ্জাবের ‘প্যাড উওম্যান’ জীবনজ্যোত কউরকে প্রার্থী করেছে। খোদ অরবিন্দ কেজরীওয়াল তাঁর হয়ে অমৃতসরে প্রচার করে গিয়েছেন।
সিধু মুচকি হাসেন। ‘কেজরীওয়াল তো পঞ্জাবীই বলতে পারেন না। তবে ভেরি ভেরি নটি বয়!’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ‘নটি বয়’? কেন? জবাব মেলে, ‘ক্ষমতায় এলে ১৮ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের এক হাজার টাকা করে
দেবেন বলেছেন। ১৬-১৭ বছরের মেয়েরা কী দোষ করল? আসলে ১৮ বছর বয়স হলেই তো ভোটটা পাওয়া যাবে। ভেরি ক্লেভার!’
আর সুখবীর-মাঝিথিয়া? সিধু যেন খাপখোলা কৃপাণ। ওই ‘দালাল সুখবীর’ আর তাঁর শ্যালককে জেলে ঢোকানোর শপথ করেন। মঞ্চে উঠে বারবার ছড়া কাটেন, ‘কোঠে পে তোতা বইঠনে না দেনা, জিজা-শালা রেহনে না দেনা’। সর্দাররা হো হো করে হাসেন। সিধু বলেন, ‘ঠোকো তালি!’
সিধুর বড্ড ইচ্ছে ছিল, ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহকে সরিয়ে তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হোক। তা হয়নি। চরণজিৎ সিংহ চন্নী মুখ্যমন্ত্রী হলেন। সিধুর ইচ্ছে ছিল, অন্তত ভোটের আগে প্রিয়ঙ্কা ও রাহুল গান্ধী তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখ করুন। সে ইচ্ছেও পূরণ হয়নি। সিধু কষ্ট পেয়েছেন। প্রকাশ করেননি। মুখের চওড়া হাসিটা একটু কমে মাপা মুচকি হাসি হয়েছে। কিন্তু ‘জওয়ানি কা জোশ’ এখনও অফুরন্ত। পূর্ব অমৃতসর বিধানসভা কেন্দ্রে দাপিয়ে প্রচার করছেন। এবং ভোট ঘোষণার আগে পর্যন্ত চন্নীর সরকারের ‘একশো এগারো দিন’-এর জনমুখী কাজের পিছনে যে আসলে তিনিই, তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
বিদ্যুতের বিল কমেছে কি না? পেট্রল-ডিজ়েলের দাম কমেছে কি না? সিধুর প্রশ্নে জনতা ‘হাঁ জি’ বলে। সিধু বলেন, ‘ঠোকো তালি’।
পঞ্জাবের আট থেকে আশি জানে, সিধু একটু আবেগপ্রবণ। দুমদাম কাজ করে বসেন। যেমন ক্রিকেটার জীবনে ১৯৯৬-এ ইংল্যান্ড সফরের আচমকা দেশে ফিরে এসেছিলেন। তবে তাঁর পঞ্জাবের মাফিয়া-রাজ, দুর্নীতি ও ড্রাগের কারবার বন্ধ করার চেষ্টায় কোনও খামতি নেই। সে কারণেই তিনি অকালি দল তো বটেই, কংগ্রেসের অনেক নেতারও চক্ষুশূল। তাঁর ভক্তদের বিশ্বাস, চন্নীকে কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করলেও সিধুর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা এখনও মিলিয়ে যায়নি। কংগ্রেস জিতে এলে ভোটের পরে অন্য কিছু হতেই পারে। পঞ্জাবের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে তাঁর গোটা রাজ্যে প্রচার করার কথা। কিন্তু ঘরের মাঠেই শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ায় তিনি অমৃতসরেই আটকে পড়েছেন। বাইরে গেলে তাঁর হয়ে স্ত্রী নভজ্যোৎ কউর, এমনকী ফ্যাশন ডিজ়াইনার কন্যা রাবিয়াকেও প্রচারে নামতে হচ্ছে। কোনও ভাবেই তাঁর হারলে চলবে না। তা হলে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার শেষ সম্ভাবনাও মিলিয়ে যাবে।
সিধু প্রতিটি জনসভায় জনতাকে বলেন, ‘আমি মিথ্যে কথা বলে ক্ষমতা দখল করতে আসিনি। পঞ্জাবের মানুষের জীবন বদলাতে এসেছি।’ জনতার হাততালির অপেক্ষা করেন না। নিজেই বলেন, ‘ঠোকো তালি!’