সিধুকে ফের কটাক্ষ অমরেন্দ্রর। —ফাইল চিত্র।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে নভজ্যোত সিংহ সিধুর সখ্য সর্বজনবিদিত। তা নিয়ে বিতর্ক অনেক দিনের। পঞ্জাবে ভোটের আগে সিধুর সঙ্গে পাকিস্তান যোগাযোগ নিয়ে ফের সরব হলেন পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ। আজ তাঁর অভিযোগ, অদক্ষতার কারণে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করে দেওয়া সিধুকে ফের মন্ত্রী করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কংগ্রেসের পাল্টা যুক্তি, প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন অনুরোধ করেছিলেন তখন কেন এ বিষয়ে সরব হননি অমরিন্দর। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, পঞ্জাব প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সিধুর সঙ্গে পাক-যোগকে ভোটের আগে সুকৌশলে উস্কে দিয়ে জাতীয়তাবাদের তাস খেলার চেষ্টা করছে বিজেপি-অমরিন্দর জোট। আজ বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা জানিয়েছেন, পঞ্জাবে ১১৭টি আসনের মধ্যে ৬৫টি আসনে প্রার্থী দেবে বিজেপি। বাকি দুই শরিক অমরিন্দরের পঞ্জাব লোক কংগ্রেস ৩৭টি ও সুখদেব সিংহের নেতৃত্বাধান শিরোমণি অকালি দল (সংযুক্ত) লড়বে ১৫টি আসনে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইমরানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিধু। তখন সে দেশের সেনাপ্রধান জাভেদ বাজওয়াকে আলিঙ্গনও করেছিলেন তিনি। সেই থেকে সিধুর সঙ্গে পাক-যোগ নিয়ে সরব পদ্মশিবির। তাঁকে যখন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল, তখনও তার পিছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে সরব হয়েছিলেন অমরিন্দর। আজ তাঁর দাবি, ‘‘সিধুকে যখন মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তখন আমার কাছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর তরফে অনুরোধ এসেছিল যে সিধুকে অন্তত আরও একবার যেন সুযোগ দেওয়া হয়। দ্বিতীয়বারেও যদি তিনি মন্ত্রী হিসাবে ব্যর্থ হন, তা হলে যেন তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।’’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, সিধু তথা কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে পাকিস্তানের সুসম্পর্কের কথা বলে জাতীয়তাবাদের হাওয়াকে উস্কে দিতে চেয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। আজ বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে গিয়ে একই সুরে পঞ্জাবের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নড্ডা। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্জাবকে নিরাপদ রাখাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। তা না হলে দেশ নিরাপদ নয়।’’ বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, সিধুর সঙ্গে পাকিস্তানের শীর্ষ নেতৃত্বের সখ্য, ওই রাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় আটকে যাওয়া, বিএসএফের পাহারার গণ্ডি সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার করার বিরোধিতা— এ গুলি দেশের নিরাপত্তা ও অখণ্ডতার জন্য কাম্য নয়। ওই বিষয়গুলিকে সামনে রেখেই আগামী দিনে প্রচারে নামবে দল। রাজনৈতিক
শিবিরের অনেকের মতে, কৃষি আইন নিয়ে যখন বিজেপিকে বিপাকে ফেলতে চাইছে কংগ্রেস, তখন উল্টো দিকে প্রচারের বিষয়বস্তুকে জাতীয়তাবাদে সীমিত রাখতে চাইছেন অমিত শাহেরা।
সিধুর উপর চাপ বাড়াতে আজ তাঁর রাজনৈতিক পরামর্শদাতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন ডিজিপি মহম্মদ মোস্তাফার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয় বিজেপি। সিধুর ওই সঙ্গীর বিরুদ্ধে পঞ্জাবের মুসলিম অধ্যুষিত মালেরকোটলা এলাকায় ঘৃণা-ভাষণ দেওয়ার কারণে ইতিমধ্যেই অভিযোগ দায়ের করেছে সে রাজ্যের পুলিশ। আজ ওই প্রাক্তন আমলার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে কমিশনের কাছে সরব হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির পঞ্জাবের ভারপ্রাপ্ত নেতা গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত। তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সিধুর হয়ে তদ্বির করছেন, প্রাক্তন আমলা ঘৃণা-ভাষণে সংঘর্ষের উস্কানি দিচ্ছেন-আসলে গোটাটাই একটি বৃহত্তর চক্রান্তের অংশ। যাকে হাওয়া দিচ্ছে কংগ্রেস। দেশের নিরাপত্তা নিয়ে খেলা করছে গান্ধী পরিবার।’’