প্রাক্তন প্রশিক্ষণরত আইএএস পূজা খেড়কর। —ফাইল চিত্র।
জালিয়াতি মামলায় দিল্লি হাই কোর্টের রক্ষাকবচ পেলেন প্রাক্তন প্রশিক্ষণরত আইএএস পূজা খেড়কর। আগামী ২১ অগস্ট পর্যন্ত তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে জানিয়েছে আদালত। সেই সংক্রান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দিল্লি পুলিশকে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, মামলার পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত পূজাকে হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
আগাম জামিন চেয়ে দিল্লির উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পূজা। সোমবার সেই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি সুব্রমনিয়ম প্রসাদের বেঞ্চে। বিচারপতি দিল্লি পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, পূজাকে হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না। তাঁর বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ, তিনি একাই সে সব কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলেও উল্লেখ করে আদালত। আইনজীবীদের সওয়াল শুনে বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘এই মুহূর্তে ওঁকে হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হচ্ছে না।’’
একইসঙ্গে তদন্তকারী আধিকারিকদের সঙ্গে সহযোগিতার নির্দেশ পূজাকে দিয়েছে আদালত। মামলায় যুক্ত করা হয়েছে ইউপিএসসিকেও। পূজার আগাম জামিনের আবেদনে ইউপিএসসি এবং দিল্লি পুলিশের বক্তব্য জানতে চেয়ে তাদের নোটিস দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী শুনানির দিন উভয় পক্ষকেই নিজেদের বক্তব্য আদালতে জানাতে হবে। ২১ অগস্ট পর্যন্ত পূজাকে গ্রেফতার না করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
জালিয়াতির দায়ে ইতিমধ্যে পূজার প্রশিক্ষণ এবং নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে ইউপিএসসি। তাঁকে সারা জীবনের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, আর কোনও দিন ইউপিএসসির কোনও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পূজা অংশ নিতে পারবেন না। ইউপিএসসি-র সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইতিমধ্যে দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থও হয়েছেন পূজা।
এর আগে গত ১ অগস্ট পূজার আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল দিল্লির একটি আদালত। সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র প্রকাশ্যে আনতে এবং ঘটনার সঙ্গে আর কে কে জড়িত, তা জানতে পূজাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন বিচারক। সেই মামলা গড়ায় হাই কোর্ট পর্যন্ত। সেখান থেকেই আপাতত রক্ষাকবচ পেয়েছেন পূজা।
উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্রের পুণের অতিরিক্ত জেলাশাসক হিসাবে নিযুক্ত পূজার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়িতে মহারাষ্ট্র সরকারের স্টিকার, লালবাতি ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া অতিরিক্ত জেলাশাসকের কক্ষ ‘দখল’ করা এবং জেলাশাসকের সহকারীর কাছে বেআইনি দাবিদাওয়া পেশ করে সেই দাবি পূরণের জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। সেখান থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। তার পর পূজার একের পর এক ‘কীর্তি’ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে! জানা যায়, ইউপিএসসি পরীক্ষায় সংরক্ষণের সুবিধা পেতে ভুয়ো প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের আবেদন করেছিলেন তিনি। দু’বার ইউপিএসসি পরীক্ষায় সেই ভুয়ো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমাও দেন তিনি। এক বার দৃষ্টিশক্তির সমস্যার কথা উল্লেখ করে, আর দ্বিতীয় বার মানসিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে। তবে নিয়োগের আগে ২০২২ সালে এমসে প্রতিবন্ধকতার পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হলেও ছ’বার নানা অজুহাতে পূজা তা এড়িয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এত গলদ সত্ত্বেও তিনি কী ভাবে চাকরি পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।