ঠান্ডায় সামান্য স্বস্তি পেতে নিভু আঁচই আশ্রয়। দিল্লির সিংঘু সীমানায় প্রতিবাদী এক কৃষক। শনিবার। ছবি: প্রেম সিংহ।
সরকারের প্রস্তাব বিবেচনা করে মঙ্গলবার অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রের সঙ্গে বসতে রাজি হল কৃষক সংগঠন। কিন্তু সরকারকে লেখা চিঠিতে সংযুক্ত কৃষক মোর্চার পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল, সংশোধন নয়, আলোচ্য বিষয় হিসাবে রাখতে হবে ৩টি কৃষি আইনের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের কথাই। যা থেকে অনুমান, ২৯ তারিখের বৈঠকেও বরফ গলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। চিঠিতে তীব্র ভাষায় কৃষকেরা লিখেছেন, গোটা আন্দোলনকে বদনাম করার জন্য সরকারি প্রচারযন্ত্র যে ভাবে নেমেছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করা হোক।
এই পরিস্থিতিতে আজ সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী এবং প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। রাহুল আজ সকালেই টুইট করে বলেন, ‘মাটির ভিতর থেকে ধ্বনি উঠছে, সরকারকে শুনতেই হবে।’ এর আগে উত্তরপ্রদেশের বিজেপির মোকাবিলায় ‘নরম হিন্দুত্বের’ আমদানি করে গোমাতার দুর্দশাকে রাজনৈতিক প্রচারের বিষয় করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। আজ তার সঙ্গে কৃষক দুর্দশার বিষয়টিকেও জুড়ে টুইট করেছেন তিনি। উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেস কর্মীদের উদ্দেশে টুইটে প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশের প্রিয় সৈনিকরা।আপনারা ‘গাই বাঁচাও কিষান বাঁচাও’-এর আওয়াজ জোরালো করছেন। কিষান হিতের জন্য আপনাদের আন্দোলনে বিশ্বের কোনও শক্তিই আটকাতে পারবে না।’
দিল্লির উপকণ্ঠে চলা বিক্ষোভের সমাধান সূত্র নিয়ে মাসাধিক কাল ধরে চলছে কেন্দ্রের সঙ্গে কৃষকদের টানাপড়েন। গত কালই দিল্লিতে চলা কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে তোপ দাগেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ‘বিরোধীরা মিথ্যা ছড়াচ্ছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ভুল বোঝানো হচ্ছে কৃষকদের।’ পাশাপাশি শুক্রবার কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আবেদন করে বলেন, “এক-দু’বছরের জন্য অন্তত কৃষি আইনকে কার্যকর করতে দিয়ে দেখুন আপনারা। তার পরে যদি দেখা যায় আইনগুলি কৃষক স্বার্থ-বিরোধী, তা হলে সেটি নিয়ে আলোচনা করবে কেন্দ্রীয় সরকার।’’ তবে নিজেদের অবস্থানে অনড়ই রয়েছেন কৃষকরা। কোনও সংশোধন নয়, তাঁরা চাইছেন তিনটি কৃষি আইনেরই প্রত্যাহার।
দিল্লি-হরিয়ানা সীমানায় সিংঘুতে আজ বিকেলে বৈঠক করে সংযক্ত কৃষক মোর্চা। সেখানেই সরকারের সঙ্গে আলোচনা ও আন্দোলনের পরবর্তী গতিপথ নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়। তার পরেই সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরা জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় সরকারকে আগামী মঙ্গলবার, অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর তাঁরা লিখিত ভাবে আলোচনার প্রস্তাব দিতে চলেছেন। যে চিঠিটি সরকারকে কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, তার ভাষা ও বয়ান অত্যন্ত কড়া। চিঠির শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘দুঃখের বিষয় ২৪ ডিসেম্বর আপনাদের পক্ষ থেকে দেওয়া চিঠিটিতে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা ছিল। আগের বৈঠকটিগুলিতে হওয়া কথাবার্তা চেপে যাওয়া হয়েছে। আমরা ধারাবাহিক ভাবে তিনটি আইন বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি। সরকার আমাদের অবস্থানকে ঘোলা করে দিয়ে এমন ভাব দেখাচ্ছে, যেন আমরা ওই তিনটি আইনের সংশোধন চাইছি। যদি আপনারা সম্মান দিয়ে কৃষকদের কথা শোনার জায়গায় থাকেন, তা হলে আগের বৈঠকগুলির তথ্যবিকৃতিকে প্রশ্রয় দেবেন না। গোটা সরকারি প্রচারযন্ত্র যে ভাবে কৃষক আন্দোলনকে বদনাম করার জন্য নেমেছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করা হোক’।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে কেউ কেউ আমাকে গণতন্ত্র শেখাচ্ছেন, রাহুলকে ঘুরিয়ে তোপ মোদীর
এর মধ্যেই বেশ ঘটা করে সোমবার দেশের ১০০ তম কিসান ট্রেনটি চালু করছেন মোদী। মহারাষ্ট্রের সাঙ্গোলা থেকে পশ্চিমবঙ্গের শালিমার পর্যন্ত চলবে কৃষিপণ্য বয়ে নিয়ে যাওয়ার ট্রেনটি। কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর ও রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালও থাকবেন ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে।