শৈবাল জানা
আরও এক বার ফিরে এল ইতিহাস! আজ বিকেলে ছত্তীসগঢ়ের দুর্গ হাসপাতালে বিনায়ক সেনের দেখা হয়ে গেল নিজের সঙ্গেই!
আবারও সেই ছত্তীসগঢ়। এবং শ্রমজীবী মানুষের সেবা করতে গিয়ে আরও এক চিকিৎসকের গ্রেফতারি। সেই ’৯২ সালে ভিলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মৃতপ্রায় শ্রমিকদের সারিয়ে তোলার ‘অপরাধে’ সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া চিকিৎসক শৈবাল জানাকে রবিবার দেখতে গিয়েছিলেন বিনায়কবাবু এবং তাঁর স্ত্রী ইলিনা। আর সেই সাক্ষাৎ উস্কে দিল খোদ বিনায়ক সেনের গ্রেফতারি এবং যাবজ্জীবন শাস্তির ইতিহাস!
তবে শুধু ইতিহাসে নয়, বিনায়কের সঙ্গে শৈবাল জানার যোগসূত্র রয়েছে বাস্তবেও। নামমাত্র খরচে মধ্য ভারতের শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য শ্রমিক নেতা শঙ্কর গুহ নিয়োগী এবং এই বিনায়কবাবুর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন শৈবাল জানা। আটের দশকে এই তিন জনের উদ্যোগ এবং ছত্তীসগঢ় জনমুক্তি মোর্চার নজরদারিতে গড়ে ওঠে দল্লি-রাজহরার শহিদ হাসাপাতাল। এক প্রকার একা হাতেই তিন দশক ধরে ওই হাসপাতাল চালিয়ে যাচ্ছেন শৈবালবাবু।
১৯৯২ সালে ভিলাই আন্দোলনে বিক্ষোভরত শ্রমিক এবং প্রান্তিক মানুষদের উপর নির্বিচারে পুলিশ গুলি চালালে ঘটনাস্থলে গিয়ে জখমদের শুশ্রূষা করেছিলেন শৈবালবাবু। বিক্ষোভকারীদের সাহায্য করার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল তখনই। অভিযোগপত্রে বলা হয়, পুলিশকে বাধা দিয়ে সরকারি কাজে বিঘ্ন ঘটিয়েছিলেন এই কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করা এই চিকিৎসক। আর সেই ঘটনার আড়াই দশক পরে গত বুধবার তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ! যদিও শহিদ হাসপাতালের আর এক চিকিৎসক দীপঙ্কর সেনগুপ্তের দাবি, এই মামলার কথা এত দিনেও সরকার বা পুলিশ তাঁদের জানায়নি! অসুস্থ শৈবালবাবু এখন রয়েছেন দুর্গ সরকারি হাসপাতালে। আর আদতে শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়াতে যাওয়া শৈবালবাবুর গ্রেফতারির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন বিভিন্ন মানুষ, গণসংগঠন।
ইতিহাসের পুনররাবৃত্তি শুধু রাজরোষে নয়, ফিরে এসেছে প্রতিরোধের ইতিহাসও। উচ্চ আদালতে ‘দেশদ্রোহী’ প্রমাণিত হওয়ার পর, ২০১০ সালে বিনায়ক সেনের জন্য যে ভাবে রাস্তায় নেমেছিল বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, সেই একই ভাবে শৈবাল জানার মুক্তির দাবি উঠে আসতে শুরু করেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন শৈবালবাবুর পক্ষ নিয়ে মুখ খুলেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই এই নিয়ে পথে নামবেন বলে জানিয়েছেন কলকাতার জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক পার্থ ঘোষ। এই নিয়ে একজোট হওয়ার বার্তা দিয়েছেন বেলুড় শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্পের সম্পাদক চিকিৎসক অনিল সাহা। সরব হয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরও। তাঁদের তরফে রঞ্জিত শুর জানিয়েছেন, এই নিয়ে আগামী ২৬ মার্চ, শনিবার অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে হবে প্রতিবাদ সভা। তবে শুধু শৈবালের মুক্তির দাবিতেই নয়, সভায় তোলা হবে ছত্তীসগঢ়ে ক্রমশ বেড়ে চলা নিপীড়নের প্রসঙ্গও। ইতিহাসের পাঠ মনে রেখেই জুলুম-অত্যাচার আর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরোধিতায় যৌথ ভাবে পথে নামবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।