সেই মুজফ্ফরনগর। এখানকার ভূমিপুত্র মহেন্দ্র সিংহ টিকায়েতের নেতৃত্বে দিল্লির বোট ক্লাবে কৃষক আন্দোলনের চাপে রাজীব গাঁধী সরকারকে চাষিদের দাবি মেনে নিতে হয়েছিল।
দিল্লির সীমানায় ফের কৃষকদের আন্দোলনের মধ্যে আজ সেই মুজফ্ফরনগরে দাঁড়িয়ে রাজীব-তনয়া প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা বললেন, ১৯৮৭-র কৃষক আন্দোলনের সামনে সে দিনের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীকে ঝুঁকতে হয়েছিল। এ বারও কেন্দ্রের সরকার অসহায় হয়ে চাষিদের দাবি মেনে নেবে। প্রিয়ঙ্কা বলেন, “সে দিন কৃষকদের দিল্লি থেকে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়নি। আজ আপনারা পিছু হটবেন না। সরকার বাধ্য হয়ে পিছু হটবে। কেন্দ্রের সরকার মজবুত নয়, দুর্বল।”
১৯৮৭-তে উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগর থেকেই মহেন্দ্র সিংহ টিকায়েতের নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলন শুরু হয়েছিল। দাবি ছিল বিদ্যুতের বিল মকুব। পরের বছরে টিকায়েতের নেতৃত্বে প্রায় পাঁচ লক্ষ কৃষক দিল্লির বিজয় চক থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত বোট ক্লাব এলাকা দখল করে আন্দোলন করে। বিদ্যুৎ, জলের মাসুল মকুবের সঙ্গে দাবি ছিল আখের বাড়তি দাম নিয়ন্ত্রণ। রাজীব-সরকার সব দাবি মেনে নেয়। আজ প্রিয়ঙ্কা সেই টিকায়েতের এলাকাতেই দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পুরনো দিনের অহঙ্কারী রাজাদের মতো আচরণ করছেন। নিজেকে মহলে বন্দি করে ফেলছেন। কারও কথাই তাঁর কানে পৌঁছচ্ছে না। ভয়ে কেউ তাঁকে কিছু বলছেও না।
২০১৩-য় এই মুজফ্ফরনগরে গোষ্ঠী সংঘর্ষের পরেই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাত-ধর্মের ভিত্তিতে জাঠ বনাম মুসলিমের মেরুকরণ হয়ে যায়। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, পুরো জাঠ ভোট নিজের ঝোলায় পুরে ২০১৭-র উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ও ২০১৯-এর লোকসভায় বিজেপি পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে জয়ের পতাকা তুলেছিল। রাষ্ট্রীয় লোক দলের নেতা অজিত সিংহ নিজে মুজফ্ফরনগর থেকে বিজেপি নেতা সঞ্জীব বলিয়ানের কাছে হেরে যান। সে সময় মহেন্দ্রর ছেলে রাকেশ ও নরেশের বিরুদ্ধে বিজেপিকে সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার ফেরে এখন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সেই টিকায়েত-ভাইদের কেন্দ্র করেই জাঠ ও মুসলিমরা ফের বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা হচ্ছেন। অজিত সিংহের পুত্র জয়ন্ত চৌধরি এত দিন তার রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে একের পর এক কিসান মহাপঞ্চায়েত করছিলেন। প্রিয়ঙ্কাও এ বার সেই পথ ধরলেন।
উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের দাবি, প্রিয়ঙ্কার জনসভায় এ দিন বিপুল ভিড় থেকেই স্পষ্ট— মানুষ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। প্রিয়ঙ্কা জনসভায় বলেন, “আমি এখানে রাজনীতির জন্য মুখ দেখাতে আসিনি। আমি বার বার আসব। আপনাদের লড়াইয়ে পাশে থাকব।”