হারানো প্রাপ্তি হল ভারতের। দেশ থেকে চুরি যাওয়া প্রাচীন শিল্পকর্ম ভারতকে ফিরিয়ে দিল আমেরিকা। প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন সময়ে তৈরি মূর্তি, মাটি বা পাথরের পাত্র, এমনকি প্রাচীন লিপি বহু বছর ধরেই চোরাপথে পাচার হয়ে আমেরিকায় এসে পৌঁছেছিল। তেমন ১৫৭টি অমূল্য শিল্পকর্ম আমেরিকার সরকারের তরফে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে তুলে দেওয়া হল।
রবিবার এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আাগেই অবশ্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মোদীকে আশ্বস্ত করেছিলেন, ভারত থেকে সাংস্কৃতিক ভাবে গুরুত্বপুর্ণ দ্রব্য যাতে চুরি হয়ে বা পাচার হয়ে আমেরিকায় না আসে, সে ব্যাপারে তিনি পদক্ষেপ করবেন। পাল্টা একই প্রতিশ্রুতি মোদীও দিয়েছিলেন।
মোদী-বাইডেনের সেই বৈঠকের পরই ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যবাহী ১৫৭টি শিল্পকর্ম ফেরত পেলেন মোদী।
ফিরে পাওয়া শিল্পনিদর্শনের ৭১টি অর্থাৎ প্রায় অর্ধেককে ভারতীয় সভ্যতা এবং সংস্কৃতির বিশেষ নিদর্শন বলে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া ৬০টি হিন্দু, ১৬টি বৌদ্ধ এবং ৯টি জৈন ধর্ম সম্পর্কিত প্রত্নতাত্ত্বিক শিল্পবস্তু রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই ১১ থেকে ১৪ শতকের মধ্যে তৈরি। কিছু খ্রিস্টপূর্ব সময়কালের শিল্পও রয়েছে।
তিন দিনের জন্য আমেরিকা সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সফর ফেরত তাঁর হাত ধরে কী কী প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য সমৃদ্ধ শিল্প ভারতে আসতে চলেছে, দেখে নেওয়া যাক।
তালিকার প্রথমেই রয়েছে ১২ শতকের তৈরি একটি ব্রোঞ্জের নটরাজ।
এছাড়া ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৈরি তামার কিছু তৈজসপত্র। যার নৃতাত্ত্বিক মূল্য বিপুল। দ্বিতীয় শতকের একটি টেরাকোটার ফুলদানিও ফেরত পাওয়া গিয়েছে।
হাঁটুমুড়ে পদ্মাসনে বসা গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন মূর্তিটি পরিচিত। তবে ১৪ শতাব্দীতে ব্রোঞ্জের তৈরি যে বুদ্ধমূর্তিটি ভারত ফিরে পেয়েছে সেখানে বুদ্ধ দাঁড়িয়ে আছেন।
ব্রোঞ্জের আরও অনেক প্রাচীন মূর্তিই ভারতে ফিরতে চলেছে। যার মধ্যে বেশ কিছু হিন্দু দেবদেবী যেমন লক্ষ্মী-নারায়ণ, একক ভাবে বিষ্ণু, হরপার্বতীর মূর্তি রয়েছে। আবার কিছুটা বিরল ধাঁচের কঙ্কালমূর্তি, নন্দী মূর্তিও রয়েছে।
একই সময়কালের কিছু অন্য রকম হিন্দু দেবদেবীর মূর্তিও ভারত থেকে পাচার হয়ে আমেরিকায় গিয়েছিল। যেমন সূর্যের রথ, পারিষদ বেষ্টিত বিষ্ণু, শিবের দক্ষিণমূর্তি (গুরুরূপে শিব), নৃত্যরত গণেশ। এ সবই ভারতকে ফিরিয়ে দিয়েছে আমেরিকার সরকার।
বৌদ্ধ এবং জৈন প্রত্নতাত্ত্বিক শিল্পকর্মগুলির মধ্যে উল্লেখ করা যেতে পারে বুদ্ধমূর্তি, বোধিসত্ত্ব, মঞ্জুশ্রী ও তারার ভাস্কর্য। এর মধ্যে সপ্তম শতাব্দীতে বালি পাথরে তৈরি একটি বুদ্ধমূর্তি আছে। এখানে অবশ্য বুদ্ধ উপবিষ্ট ভঙ্গিমায়। তবে ধ্যানমগ্ন নন। এক হাত হাঁটুতে রেখে অন্য হাতে অভয় দান করছেন। এ ছাড়া জৈন ধর্মের ২৪ জন জৈন তীর্থঙ্করের মূর্তি, পদ্মাসনে বসা তীর্থঙ্কর এবং পঞ্চাদশ শতাব্দীতে ব্রোঞ্জের তৈরি তিন তীর্থঙ্করের পাশাপাশি বসে থাকার একটি ভাস্কর্যও রয়েছে।
সাংস্কৃতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলির মধ্যে রতিভাস্কর্যও রয়েছে। এগুলি একাদশ থেকে দ্বাদশ শতকে মধ্য ভারতে তৈরি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা।
প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য সম্পন্ন এই সব ভাস্কর্য ফেরত পাওয়ার পর একটি বিবৃতি জারি করেছে ভারত সরকার। তাতে দাবি করা হয়েছে, ১৯৭৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভারত থেকে চুরি যাওয়া মাত্র ১৩টি প্রত্নবস্তু উদ্ধার করা গিয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এমন ২০০টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বিদেশ থেকে দেশে ফেরানো হল।