বিতর্কের নাম বিজয়কুমার!
ইউপিএ জমানায় তৎকালীন সেনাপ্রধানকে নিয়ে কার্যত নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল মনমোহন সিংহকে! এখন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী বিজয়কুমারকে নিয়ে তাঁর চেয়েও বেশি ভুগছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী! যিনি সাংবাদিকদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে আজ ফের সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন।
ইয়েমেনের আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধার নিয়ে মন্তব্য করে গত কালই এক প্রস্ত হইচই বাঁধিয়েছিলেন বিজয়কুমার (ভি কে) সিংহ। বলেন, ‘এর চেয়ে পাক দূতাবাসে যাওয়াও ছিল অনেক রোমাঞ্চকর।’ তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সমালোচনা হওয়ায় মন্ত্রী আজ সাংবাদিকদেরই নিশানা করে টুইট করেন, ‘প্রেস্টিটিউটদের (presstitute) থেকে এর চেয়ে বেশি কী প্রত্যাশা করা যায়!’ সেই সঙ্গে বলেন, ‘আগের বার ওরা ভেবেছিল এই শব্দে ‘ই’-র বদলে ‘ও’ রয়েছে।’ এই মন্তব্য নিয়েই আপত্তি উঠেছে। অনেকে বলছেন, শালীনতার সীমা পেরিয়ে গিয়েছেন ভি কে।
বস্তুত, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ বলছেন, ইউপিএ হোক বা এনডিএ— সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলাটা যেন নিয়ম করে ফেলেছেন ভি কে সিংহ। কেন্দ্রের শীর্ষ সূত্র বলছে, ভি কে-র এই মন্তব্যে চটেছেন মোদীও। অবসরের পর-পরই তিনি যে ভাবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আক্রমণে নেমেছিলেন, তাতে লোকসভা ভোটে বিজেপির সুবিধে হয়েছিল। মোদী ভেবেছিলেন, প্রাক্তন জেনারেল তাঁর অনুগত সৈনিক হবেন। কিন্তু মজা করে বিজেপিরই এক নেতা আজ বলেন, ‘‘উনি আসলে একটি দিগ্ভ্রান্ত মিসাইল!’’
সূত্রের দাবি, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও এখন ভি কে সিংহকে তাঁর মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে চাইছেন না। ক’দিন আগেই বেফাঁস মন্তব্যে নিজের মন্ত্রকের মুখ পুড়িয়েছিলেন। টুইট করেছিলেন, বিরক্তি সত্ত্বেও তাঁকে ‘ডিউটি’ করতে পাক হাইকমিশনে যেতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির একটি সূত্র বলছে, মন্ত্রিসভার পরবর্তী রদবদলে ভি কে-কে সরানো হতে পারে। প্রকাশ্যেও আজ ওই মন্তব্য থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে বিজেপি। দলের তরফে বলা হয়েছে, ‘‘টুইটার ব্যক্তিগত মত প্রকাশের জায়গা। সেখানে মন্ত্রী কী বলেছেন, সেটা তাঁর ব্যাপার।’’ কিন্তু বিরোধীরা তাতে ভুলছেন না। অবিলম্বে ভি কে-র ইস্তফা চেয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র খুশবু বলেন, ‘‘বিদেশ প্রতিমন্ত্রীর নিন্দনীয় মন্তব্যে আমরা বিচলিত, কিন্তু বিস্মিত নই। বিজেপির তো এটাই সংস্কৃতি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সম্প্রতি মিডিয়াকে ‘বাজারু’ বলেছেন।’’ বিদেশ প্রতিমন্ত্রীর ‘অশালীন’ ইঙ্গিত নিয়ে অসন্তোষ জানায় অন্য বিরোধী দলগুলিও। সংযুক্ত জনতা দলের নেতা শরদ যাদব বলেন, ওঁর মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন।
বতর্মান সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগকে নিয়েও অতীতে বিতর্কিত মন্তব্য করেন ভি কে সিংহ। সে বারও তাঁর ইস্তফা চেয়েছিল কংগ্রেস। এখন ভি কে-র আসন টলমল দেখে সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে কংগ্রেস। যাতে ভি কে-কে সরানো হলে কংগ্রেস বলতে পারে, তাদের চাপেই কাজ হল।