রামনাথ কোবিন্দ।
বাপুর উদ্ধৃতিটিও পুরো হয়নি। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ শুধু বলেছেন, ‘‘দেশ ভাগের পর ভারতের সর্বধর্মের বিশ্বাসেই সব থেকে বেশি আঘাত এসেছে। সে পরিবেশে জাতির জনক মহাত্মা গাঁধী বলেছিলেন, পাকিস্তানের যে হিন্দু ও শিখ সেখানে থাকতে চান না, ভারতে আসতে পারেন...’’
এটুকু বলা মাত্রই শুরু হল টেবিল চাপড়ানো। নেতৃত্বে নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে গোটা বিজেপি ব্রিগেড। আওয়াজে গমগম করছে সংসদের সেন্ট্রাল হল। সিএএ, এনপিআর, এনআরসি-র বিরোধিতায় কিছু ক্ষণ আগেই সংসদের গাঁধী মূর্তির পাদদেশে সনিয়া গাঁধী-রাহুল গাঁধীরা আরও ১৩ দলের নেতাদের নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। রাহুল না-বাঁধলেও সনিয়া-সহ বাকিরা হাতে কালো ফিতে বেঁধেছেন। এই বিরোধী জোটে অবশ্য তৃণমূল ছিল না। তারা আলাদা জায়গায় বসে ‘নো-সিএএ’ পোস্টার তুলে ‘নীরব প্রতিবাদ’ জানিয়েছে।
এমন বিরোধিতা আসবে, মোদী জানতেন। বাপুকে সামনে রেখে তাই রাষ্ট্রপতির বক্তৃতাতেও সুকৌশলে রেখেছেন নাগরিকত্বের কথা। কিন্তু টেবিল চাপড়ানোর গর্জন দিয়েই মাত করতে চেয়েছেন বিরোধী শিবিরকে। সেই গর্জন একটু থামতেই বাপুর উদ্ধৃতি পুরো করলেন রাষ্ট্রপতি: ‘‘তাঁদের (যাঁরা ধর্মের কারণে নির্যাতিত হয়ে ভারতে এসেছেন) স্বাভাবিক জীবন দেওয়া সরকারের কর্তব্য।’’ এর পর বললেন, ‘‘বাপুর এই ভাবনাকে সমর্থন করেই অনেক নেতা বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। রাষ্ট্রনির্মাতাদের এই ইচ্ছাকে সম্মান করা আমাদের দায়িত্ব। সংসদে দুই সভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ করে তাঁদের ইচ্ছাপূরণ হয়েছে...।’’
রাষ্ট্রপতির বক্তব্য এখানেই শেষ হয়েছিল, এমন নয়। কিন্তু মোদীর বাঁ হাতে টেবিল চাপড়ানোর নেতৃত্বে এ বার যে গর্জন শুরু হল, তা আর সহজে থামতে চাইল না। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল বিরোধীদেরও। তাঁরাও উঠে আওয়াজ তুললেন: ‘সেম-সেম’।
পরে ক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতারা বলেন, ‘‘বাপুকে ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ করে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে নিজেদের খামতি ঢাকতে চাইছেন মোদী? রাস্তায় এত লোক প্রতিবাদ করছেন, একটি শব্দ নেই? রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে এ ভাবে মিথ্যে বলাচ্ছে সরকার?’’
তবে এক দিক দিয়ে বিক্ষোভের প্রভাব পড়েছে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায়। এ দিন তাঁর বক্তৃতাতেও এনআরসি-র উল্লেখটুকু রাখা হয়নি। অথচ, গত বছর ২০ জুন সংসদে রাষ্ট্রপতি সরকারের দেওয়া যে বক্তৃতা পড়েছিলেন, তাতে বলা হয়েছিল— অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নাগরিক পঞ্জি করতে সরকার বদ্ধপরিকর। অনুপ্রবেশকারীরা নিরাপত্তার পক্ষে বিরাট ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক ভারসাম্যও ব্যহত করছে তারা। তাদের চিহ্নিত করা হবে। এ দিন কিন্তু সেই পঞ্জির উল্লেখটুকুও সরকার রাখেনি কোবিন্দের ভাষণে।