মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন বিরোধীদের তরফে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যশবন্ত সিন্হা। উপস্থিত রাহুল গান্ধী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশ যাদবেরা। পিটিআই
‘কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আসলে আদর্শের লড়াই। ঘৃণা, সাম্প্রদায়িকতা, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সহমর্মিতা, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্রের লড়াই।’ রাষ্ট্রপতি পদে বিরোধীদের সম্মিলিত প্রার্থী যশবন্ত সিনহার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর আজ এই মর্মেই বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হলেন কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে ও বাম নেতারা। পরে সাংবাদিক বৈঠক করে যশবন্ত জানিয়েছেন, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে তাঁর এই লড়াই। তিনি ভোটের জন্য বিজেপিতে নিজের পুরনো বন্ধুদের সঙ্গেও যোগাযোগ করবেন।
আজ সকালে রাহুল গান্ধী, শরদ পওয়ার, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, জয়রাম রমেশ, অখিলেশ সিংহ যাদব, সীতারাম ইয়েচুরির মতো নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সংসদ ভবনে পৌঁছন যশবন্ত। বিরোধীদের হাত কিছুটা শক্ত করে টিআরএস আজ সমর্থন করেছে যশবন্তকে। তাঁর মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় উপস্থিত ছিলেন টিআরএস নেতা তথা তেলঙ্গানার মন্ত্রী, কে টি রামা রাও। সাম্প্রতিক অতীতে এই প্রথম রাহুল গান্ধী ও অভিষেককে এক সঙ্গে দেখা গেল। সূত্রের খবর, দু’জনের মধ্যে সৌজন্য বিনিময় হয়েছে। তবে রাজ্যসভার সেক্রেটারি জেনারেল তথা রাষ্ট্রপতি ভোটের রিটার্নিং অফিসারের ঘরে উপস্থিত থাকলেও ভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি অভিষেক।
আজ সংসদ থেকে বিজয় চক পর্যন্ত একসঙ্গে হেঁটে আসেন রাহুল, সৌগত, তিরুচি শিবা, সীতারাম ইয়েচুরিরা। রাহুলের কথায়, “এই নির্বাচন আসলে দু’টি বিচারধারার মধ্যে লড়াই। আরএসএস-এর ঘৃণার বিপরীতে মানুষের প্রতি সহানুভূতির লড়াই।” একই সুরে সৌগত রায়ও বলেন, “রাষ্ট্রপতির ভোটকে কেন্দ্র করে দু’টি ভিন্ন আদর্শ মুখোমুখি। একদিকে সাম্প্রদায়িকতা অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষতা। পাশাপাশি, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রায় সব বিরোধী দল এক ছাতার তলায় এসেছে, সেটা খুবই বড় কথা।” রাষ্ট্রপতি ভোটকে ঘিরে এই একজোট হওয়ার বিষয়টিকে ‘রামধনু জোট’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন সৌগতবাবু। সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, “দ্রৌপদী মুর্মুর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু বিষয়টি তো জাতপাতের রাজনীতি নয়। কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়াইও নয়।”
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, জনজাতি সম্প্রদায়ের দ্রৌপদীকে এনডিএ প্রার্থী করায় কিছুটা চাপে পড়েছে বিরোধীপক্ষ। মুর্মুর বিরোধিতা করার ফলে সরাসরি জনজাতি বা পিছিয়ে পড়ার শ্রেণীর ক্ষমতায়নের বিরোধিতার বার্তা যেতে পারে, এমন ভাবনা তৈরি হচ্ছে। আর সেই কারণেই আজ বারবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের লড়াইকে ব্যক্তিস্তর থেকে বিযুক্ত করার চেষ্টা দেখা গিয়েছে বিরোধী নেতাদের মধ্যে।
যশবন্ত নিজে বলেছেন, “কোনও সম্প্রদায়ের নেতা শীর্ষ পদে গেলেই কি সেই সম্প্রদায়ের সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যায়? বর্তমানে যিনি রাষ্ট্রপতি তিনিও কোনও একটি সম্প্রদায় থেকেই এসেছেন। কিন্তু তাঁর রাষ্ট্রপতি হওয়ার কারণে কি সেই সম্প্রদায়ের আর কোনও সমস্যা নেই?” এর আগে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে কোনও উত্তর পাননি যশবন্ত। আজ জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। প্রথমে পাননি। পরে রাজনাথ যখন পাল্টা ফোন করেন তখন তিনি ধরতে পারেননি। বাজপেয়ী জমানার প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহা জানিয়েছেন, ‘পুরনো বন্ধু’দের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি।
আগামিকাল কেরল থেকে প্রচার শুরু করবেন যশবন্ত। তাঁর প্রচারের জন্য ১১ সদস্যের একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। এই কমিটিতে তৃণমূলের তরফে রয়েছেন সুখেন্দুশেখর রায়, কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ, ডিএমকে-র তিরুচি শিবা, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি প্রমুখ নেতারা।