প্রতীকী ছবি।
যোগী-রাজ্যে এ বারে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া ‘ডাক্তারে’র খোঁজও মিলল! তা-ও একেবারে সার্জন! যিনি একটি অবৈধ নার্সিংহোমে ব্লেড দিয়ে অন্তঃসত্ত্বার সন্তান প্রসব করানোর চেষ্টা করেছেন! আর সেটা করতে গিয়ে প্রবল রক্তপাতের জেরে মৃত্যু হয়েছে মা এবং সন্তান দু’জনেরই।
ঘটনাস্থল উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুর জেলার সাইনি গ্রাম। মা সারদা হাসপাতাল নামে একটি অবৈধ নার্সিংহোমে ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার রাতে। পুলিশ জানিয়েছে, বছর তিরিশের স্কুলছুট ‘ডাক্তারে’র নাম রাজেন্দ্র শুক্ল। ক্লাস এইটে উঠে স্কুল ছেড়ে দেন তিনি। তার পর শুরু করেন হাতুড়েগিরি। সেই সূত্রেই নার্সিংহোমটির মালিক রাজেশ সাহনি তাঁকে নিজের সংস্থায় সার্জারি করার জন্য নিয়োগ করেন। পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় কোনও যন্ত্রপাতিই নেই নার্সিংহোমটিতে। হাতুড়ে ডাক্তার এবং আয়াদের সাহায্যেই চলত সেটি। বুধবারের ঘটনায় মৃতার স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ আপাতত রাজেন্দ্র এবং রাজেশ দু’জনকেই গ্রেফতার করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ক’দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী পদে যোগী আদিত্যনাথের চার বছর পূর্তিতে বিপুল বিজ্ঞাপন দিয়ে সরকারের নানা ‘সাফল্যে’র কথা তুলে ধরেছে রাজ্যের বিজেপি সরকার। তাতে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সাফল্যেরও ঢালাও প্রচার রয়েছে। কিন্তু রাজধানী লখনউ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এমন ছবি সরকারের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার স্বামী রাজারাম নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে তাদের দ্বারস্থ হলে গোটা বিষয়টি সামনে আসে। অভিযোগে রাজারাম জানান, তাঁর স্ত্রী পুনম (৩৩) ও তাঁদের সন্তান চিকিৎসায় গাফিলতির জন্য মারা গিয়েছে। সুলতানপুরের পুলিশ সুপার অরবিন্দ চতুর্বেদী জানান, রাজেশ সাহনির অবৈধ নার্সিংহোমে অপারেশন করানোর প্রায় কোনও ব্যবস্থা বা সাজসরঞ্জাম নেই। সেখানে হাতুড়েরা ব্লেড দিয়ে অপারেশন করেন! বুধবার রাজারামের স্ত্রীর প্রসব যন্ত্রণা উঠলে তাঁকে একজন নার্সিং সহায়িকা পরীক্ষা করে কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে বলেন। ডিহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীর অবস্থা দেখে তাঁকে কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। রাজারাম স্ত্রীকে নিয়ে ওই নার্সিংহোমে যান। সেখানে ব্লেড দিয়ে রোগীর সিজারিয়ান সেকশন করতে গিয়েই বিপত্তি বাধান হাতুড়ে ডাক্তার রাজেন্দ্র শুক্ল। শুরু হয় প্রবল রক্তপাত। ওই অবস্থায় রাজারামকে পরামর্শ দেওয়া হয় জেলা হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যেতে। কিন্তু রাজারাম যতক্ষণে লখনউয়ের হাসপাতালে পৌঁছন, ততক্ষণে প্রবল রক্তপাতে মা এবং সন্তান দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচই শুরু হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ ও প্রশাসন। সমস্ত অবৈধ ক্নিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।