প্রজ্জ্বল রেভান্না। — ফাইল চিত্র।
শতাধিক মহিলাকে ধর্ষণে অভিযুক্ত বিজেপি সমর্থিত জেডিএস প্রার্থী প্রজ্বল রেভান্নার জার্মানিতে পালিয়ে যাওয়া নিয়ে কেন্দ্রকে বার বার দায়ী করেছে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। আজ বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করে জার্মানি গিয়েছেন প্রজ্বল। বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রজ্বল কোনও রাজনৈতিক অনুমোদন চাননি, দেওয়াও হয়নি। ফলে ভিসা নোটও জারি করেনি বিদেশ মন্ত্রক।
প্রসঙ্গত, সাংসদদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট থাকলেও বিদেশে যেতে গেলে বিদেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র প্রয়োজন। প্রজ্বলের সেই অনুমোদন ছিল না কি না, প্রশ্ন করা হলে অবশ্য জবাব এড়িয়ে গিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। গত কালই কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে প্রজ্বলের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল ও অবিলম্বে তাঁকে দেশে ফেরানোর বন্দোবস্তের আবেদন জানিয়েছেন।
প্রজ্বল ইতিমধ্যেই তদন্তকারী সংস্থা সিটের কাছে উপস্থিত হওয়ার জন্য সাত দিনের সময় চেয়েছে। তবে সিট সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বর জানিয়েছেন, প্রজ্বলের বিরুদ্ধে ‘লুক আউট’ নোটিস জারি করা হয়েছে। অবিলম্বে দেশে ফিরে সিটের মুখোমুখি না হলে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হবে।
প্রজ্বল এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছেন, বেঙ্গালুরুতে না থাকায় সিটের মুখোমুখি হতে পারছেন না। আইনজীবী মারফত সিআইডি, বেঙ্গালুরুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলেও দাবি করেছেন। বলেছেন, “সত্যি সামনে আসবেই।” প্রজ্বলের আইনজীবীর দাবি, যে হাজারতিনেক ভিডিয়ো ঘিরে বিতর্কের ঝড়, সেগুলি ভুয়ো। কর্নাটক সরকার বিশেষ আইনজীবী হিসেবে বিএনজগদীশকে নিয়োগ করেছে প্রজ্বল মামলার জন্য।
এ দিকে সিটের নোটিস পেতেই যৌন কেলেঙ্কারিতে আর এক অভিযুক্ত প্রজ্বলের বাবা এইচডি রেভান্না বেঙ্গালুরুর দায়রা আদালতে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছেন। আগামিকাল এই মামলার শুনানি হতে পারে।
আজ কর্নাটকে ভোটপ্রচারে প্রজ্বল কাণ্ডে নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র আক্রমণ করেছেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেছেন, “প্রজ্বল রেভান্না ৪০০ মহিলাকে ধর্ষণ করেছেন, ভিডিয়ো তৈরি করেছেন। এ যৌন কেলেঙ্কারি নয়, অজস্র মহিলাকে ধর্ষণ বলা যেতে পারে। স্টেজে প্রধানমন্ত্রী এমন ব্যক্তিকে সমর্থন করেছেন। কর্নাটককে (মোদী) বলছেন, ‘আপনারা যদি এই ধর্ষককে ভোট দেন, তা হলে আমার সাহায্য হবে।’ কর্নাটকের প্রত্যেক মহিলার জানা উচিত, যখন প্রধানমন্ত্রী আপনাদের কাছে ভোট চাইছিলেন, উনি জানতেন প্রজ্বল কী করেছেন। বিজেপির নেতারাও জানতেন। তা-ও উনি সমর্থন দেন। জোট বেঁধেছেন। দেশের মহিলাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া উচিত।” সরব হয়েছেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা, সঞ্জয় সিংহও।
এ দিকে সিট নোটিস দেওয়ার পর থেকেই বেপাত্তা প্রজ্বলদের প্রাক্তন গাড়িচালক কার্তিক। তিনিই দাবি করেছিলেন, বিজেপি নেতা দেবরাজ গৌড়াকে বহু আগে প্রজ্বলের যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিয়ো ভর্তি পেন ড্রাইভ দিয়েছিলেন। প্রজ্বলের কাকা তথা জেডিএস নেতা এইচডি কুমারস্বামীর অভিযোগ, কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার কার্তিককে মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দিয়েছেন। শিবকুমার যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে কেন্দ্রের থেকে তথ্য নেওয়া হোক।
রেভান্না পরিবারের তরফে অবশ্য ফের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তুলে ধরা হয়েছে। আজ প্রজ্বলের ভাই সুরজ রেভান্না জানিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল করতেই এমনটা করা হয়েছে। সুরজ বলেন, “এইচডি রেভান্না হাসনে খুবই জনপ্রিয়। যাঁরা সেটা মেনে নিতে পারেননি, তাঁরাই এটা ঘটিয়েছে।” এর পাশাপাশি জানিয়েছেন, গোটা ঘটনা নিয়ে দলীয় কর্মীদের কোনও ধোঁয়াশা নেই। তাঁরা নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ করছেন। প্রজ্বল কোথায় রয়েছেন, তা তিনি জানেন না বলেও দাবি সুরজের।