প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর। ফাইল চিত্র
লোকসভা ভোট তখন প্রায় শেষ লগ্নে পৌঁছেছে। ভোপালে বিজেপির চমক দেওয়া প্রার্থী সাধ্বী প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর নাথুরাম গডসেকে ‘দেশপ্রেমিক’ বলে বসলেন। নিমেষে তোলপাড় রাজনীতি। গাঁধীর হত্যাকারীকে ‘দেশপ্রেমিক’ বলা? দলের নির্দেশে ক্ষমা চাইতে হল প্রজ্ঞাকে।
কিন্তু ভোটের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিলেন একেবারে অনন্য পথ। বললেন, ‘‘উনি (প্রজ্ঞা) ক্ষমা চেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু বাপুজিকে অপমান করার জন্য আমি কোনও দিন তাঁকে মন থেকে ক্ষমা করতে পারব না।’’ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও শোনালেন কঠোর অবস্থান। বলা হল, দশ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ করা হবে প্রজ্ঞার বিরুদ্ধে। তার পর কত দশ দিন পেরিয়ে গিয়েছে! আজ কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধীদের গলায় আবার ফিরে এল প্রধানমন্ত্রীর সেই পুরনো কথা।
কেন?
গডসে বিতর্কের পরেও প্রজ্ঞা ভোটে জিতেছেন। দিব্য সংসদে আসছেন। আজ শোনা গেল, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পরামর্শদাতা কমিটির সদস্যও হয়েছেন। এই কমিটিতেই আর এক জনকেও সদস্য করা হয়েছে। যাঁর নাম ফারুক আবদুল্লা। যিনি এখন গৃহবন্দি। ফলে সংসদেই আসতে পারছেন না। বিরোধীরা সংসদে হল্লা করেও সরকারের থেকে জুতসই উত্তর পাচ্ছেন না। কিন্তু মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় অভিযুক্ত প্রজ্ঞাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কমিটিতে শামিল করা নিয়ে আজ ফের তেড়েফুঁড়ে উঠলেন বিরোধীরা। জঙ্গি হানায় অভিযুক্ত আর গডসের ভক্ত দেশের প্রতিরক্ষা কমিটির সদস্য? যে কমিটির নেতৃত্ব দেন খোদ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ? তাঁকে প্রতিরক্ষা নিয়ে পরামর্শ দেবেন এই সাংসদ?
কংগ্রেসের একাধিক নেতা আজ এ নিয়ে সরব হলেন দিনভর। কংগ্রেসের অভিযোগ, ‘‘এ তো সামরিক বাহিনীর অপমান। প্রজ্ঞার বিরুদ্ধে এখনও আদালতে মামলা চলছে। তাঁকে এই কমিটির সদস্য করার পথে হয়তো সাংবিধানিক দিক থেকে কোনও বাধা নেই। কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য আদৌ এটি ভাল লক্ষণ নয়। প্রধানমন্ত্রী কি এখন মন থেকে প্রজ্ঞাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন তা হলে?’’
২০০৬ সালে মালেগাঁও বিস্ফোরণে অন্যতম অভিযুক্ত প্রজ্ঞা। আপাতত জামিনে মুক্ত। লোকসভা ভোটের সময় হিন্দুত্বের তাস খেলতে খেলতে ভোপাল কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহের বিরুদ্ধে আচমকাই তাঁকে প্রার্থী করে বিজেপি। তার পর থেকে একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন প্রজ্ঞা। কখনও বলেছেন, তাঁকে গ্রেফতার করার খেসারত দিয়ে, তাঁর ‘অভিশাপে’ই মুম্বই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন তৎকালীন এটিএস প্রধান হেমন্ত কারকারে। কখনও বলেছেন, বিরোধীদের ‘মারক শক্তি’ই সুষমা স্বরাজ আর অরুণ জেটলির মৃত্যুর জন্য দায়ী। সেই প্রজ্ঞা প্রতিরক্ষা কমিটিতে! বিজেপির যুক্তি, নিরীহরা যাতে সাজা না পান, সে ব্যাপারে দিশা দেখাতে পারবেন প্রজ্ঞাই।