অশান্ত মণিপুরে জ্বলছে ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র। — প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
সারা শরীরে আটটি গভীর ক্ষত। শরীরের একাধিক হাড় ভাঙা। ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে মাথার খুলির একাংশ। মণিপুরে হিংসার ঘটনায় নিহত মহিলার ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উঠে এল এমনই তথ্য।
অভিযোগ, গত ৭ নভেম্বর মণিপুরের জিরিবাম জেলার জ়াইরন গ্রামে স্বামীর সামনেই ধর্ষণ করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তিন সন্তানের মা ওই মহিলাকে। সেই ঘটনার পর থেকেই উত্তপ্ত জিরিবাম জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন গ্রামবাসীরা। পরদিনই ময়নাতদন্তের জন্য শিলচরে পাঠানো হয় মহিলার দেহ। এ বার সেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে এল।
রিপোর্টে জানা গিয়েছে, মহিলার দেহ ৯৯ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। শরীরের একাংশ কার্যত পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে ডান হাত এবং দুই পায়ের নিম্নাংশ। ঘাড়ের কাছে মিলেছে গভীর ক্ষত। আঘাতের চিহ্ন রয়েছে ডান ঊরুতেও। শরীরের একাধিক হাড় ভেঙে গিয়েছে। ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে মাথার খুলির একাংশ। মুখমণ্ডল-সহ গোটা দেহ এমন ভাবে পুড়ে গিয়েছে যে শনাক্ত করারও উপায় নেই।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কি না, তা এখনও জানা যায়নি। শরীরের নীচের অংশ এতটাই পুড়ে গিয়েছে যে এখন আর ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া অসম্ভব। তবে সম্ভবত মহিলার ডান ঊরু কোনও ধারালো অস্ত্রে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে গিয়েছে। বাম ঊরুতেও একটি পাঁচ সেন্টিমিটার দীর্ঘ পেরেক বিঁধে রয়েছে। ময়নাতদন্তে এ-ও জানা গিয়েছে, অত্যাচারের জেরে নয়, আগুনে পুড়েই মৃত্যু হয়েছে ওই মহিলার।
গত ৭ নভেম্বর গভীর রাতে জ়াইরন গ্রামে হামলা চালায় এক দল দুষ্কৃতী। সারা রাত ধরে চলে লুটপাট, অত্যাচার এবং দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব। গ্রামের অন্তত ১৭টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতপাত এবং ধর্মীয় হিংসার জেরেই এই ঘটনা বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। জিরিবামের ওই গ্রামে মূলত আদিবাসীদের বাস। ঘটনার পর থেকে সরব কুকি, জ়োমি, মার গোষ্ঠীর নেতারা। তাঁরা কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবিও জানিয়েছেন। চুরাচাঁদপুরের আদিবাসী সম্প্রদায়ের তরফেও বিবৃতি দিয়ে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারির দাবি জানানো হয়েছে।