বাঁ দিক থেকে, ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা, নয়াব সিংহ সাইনি এবং দুষ্মন্ত চৌটালা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাত পোহালেই বিধানসভা নির্বাচন হরিয়ানায়। এক দফাতেই ভোট হবে রাজধানী দিল্লির পড়শি রাজ্যের ৯০টি বিধানসভা কেন্দ্রে। মূল লড়াই গত এক দশকের শাসকদল বিজেপি এবং তার আগের এক দশকের শাসক কংগ্রেসের মধ্যে। এ ছাড়া জাঠ অধ্যুষিত এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌটালার আইএনএলডি (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোকদল) এবং তাঁর নাতি তথা প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্মন্ত চৌটালার দল জেজেপি (জননায়ক জনতা পার্টি)।
হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা দু’কোটিরও বেশি। তাঁরা ১০৩১ জন প্রার্থীর জয়-পরাজয় নির্ধারণ করবেন। মোট বুথের সংখ্যা ২০৬২৯। উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নয়াব সিংহ সাইনি (বিজেপি, লডওয়া), প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা (কংগ্রেস, গারহি সাম্পলা-কিলোই), আন্তর্জাতিক মহিলা কুস্তিগীর বিনেশ ফোগাট (কংগ্রেস, জুলানা) এবং প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্মন্ত চৌটালা (জেজেপি, উচানা কালান)। আগামী মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) জম্মু ও কাশ্মীরের সঙ্গেই ভোটগণনা হবে হরিয়ানায়। তার আগে শনিবার ভোটপর্ব শেষের পরেই দুই রাজ্যের বুথফেরত সমীক্ষা প্রকাশিত হবে বিভিন্ন চ্যানেলে। যদিও ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস বলছে, অনেক সময়ই এমন সমীক্ষার সঙ্গে প্রকৃত ফল মেলে না।
আগের দশক পর্যন্তও হরিয়ানায় তৃতীয় বা চতুর্থ ‘শক্তি’ হিসাবেই বিবেচিত হত বিজেপি। কখনও দেবীলাল-ওমপ্রকাশ চৌটালার আইএনএলডি, কখনও বংশীলালের হরিয়ানা বিকাশ পার্টির ছোট শরিক হয়ে কয়েকটি মন্ত্রীপদ পেলেও অটলবিহারী বাজপেয়ী-লালকৃষ্ণ আডবাণীদের জমানায় কখনও উল্লেখ্যযোগ্য শক্তি হয়ে উঠতে পারেনি তারা। কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদীর উত্থানের পরেই পরিস্থিতি বদলে গিয়েছিল। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে রাজ্যের ১০টি লোকসভা আসনের মধ্যে আটটি আসনে লড়ে সাতটিতে জিতেছিল তারা। সে বছরের অক্টোবরের বিধানসভা ভোটে এক দশকের কংগ্রেস শাসনের ইতি টেনে প্রথম বার হরিয়ানায় ক্ষমতা দখল করেছিল ‘পদ্ম’ শিবির। ৩৩ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে ৯০ আসনের মধ্যে ৪৭টিতে জিতেছিল।
এর পর ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ‘মোদী ঝড়ে’ ভর করে১০টি আসনেই জিতেছিল বিজেপি। পেয়েছিল ৫৮ শতাংশ। কিন্তু সে বছরের অক্টোবরের বিধানসভা ভোটে ধাক্কা খায় তারা। ত্রিশঙ্কু বিধানসভায় জেতে ৪০টি আসনে। এর পরে আইএনএলডি-ছুট দুষ্মন্ত চৌটালার দল জেজেপির ১০ বিধায়কের সমর্থনে ফের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মনোহরলাল খট্টর। কিন্তু চলতি বছরে লোকসভা ভোটের আগে সে জোট ভেঙে যায়। গত মার্চে খট্টরকে সরিয়ে নয়াব সিংহ সাইনিকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। এ বারের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস এবং বিজেপি দু’দলই হরিয়ানায় পাঁচটি করে আসনে জিতেছে। লোকসভায় আপ এবং কংগ্রেস আসন সমঝোতা করলেও এ বার দু’দল আলাদা ভাবে লড়েছে। লোকসভা ভোটের হিসাবে বিজেপি ৪৬ শতাংশ এবং কংগ্রেস ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। অর্থাৎ, মাত্র দু’শতাংশের ফারাক রয়েছে দু’দলে। এ বার কি সেই ব্যবধান মুছতে পারবে কংগ্রেস? না কি অর্ধ শতকের নজির ভেঙে টানা তিনটি বিধানসভা ভোটে জয়ী হবে বিজেপি?