Haryana Assembly Election 2024

‘বালী-সুগ্রীবের’ লড়াই পথের কাঁটা কংগ্রেসের

শনিবার হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বৃহস্পতিবার বিকেলে তার প্রচারে ইতি পড়ল। কংগ্রেস নেতারা নিশ্চিত, দশ বছর ক্ষমতায় থাকা বিজেপিকে সরিয়ে এ বার তাঁরাই সরকার গড়ছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হবেন কে?

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

কৈথল (হরিয়ানা) শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৫:২০
Share:

হরিয়ানার নুহ-তে ‘বিজয় সঙ্কল্প জনসভা’য় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।

“কৈথল নাম কোথা থেকে এসেছে, জানেন তো? কপিস্থল থেকে। মানুষের বিশ্বাস, এখানেই রামভক্ত হনুমানের জন্ম হয়েছিল।” আর কংগ্রেসের অবস্থা? এ বার হরিয়ানার প্রবীণ কংগ্রেস নেতার গোঁফের আড়ালে মুচকি হাসি— “হরিয়ানা কংগ্রেসে এখন বালী-সুগ্রীবের লড়াই চলছে।”

Advertisement

শনিবার হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বৃহস্পতিবার বিকেলে তার প্রচারে ইতি পড়ল। কংগ্রেস নেতারা নিশ্চিত, দশ বছর ক্ষমতায় থাকা বিজেপিকে সরিয়ে এ বার তাঁরাই সরকার গড়ছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হবেন কে?

এই নিয়েই ‘বালী-সুগ্রীবের লড়াই’! এক দিকে জাঠ নেতা ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা। তিনি কাউকে সূচ্যগ্র মেদিনীও ছাড়তে নারাজ। অন্য দিকে, দলিত নেত্রী কুমারী শৈলজা। গত পাঁচ বছর তাঁদের কথা নেই। রাহুল গান্ধী প্রচারে গিয়ে হুডা-শৈলজার হাতে হাত ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তার পরেও শৈলজা প্রচার না করে দিল্লিতে বসে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার প্রচারের শেষ দিনেও হরিয়ানায় না গিয়ে শৈলজা দশ জনপথে গিয়ে সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

Advertisement

এ দিকে, মহেন্দ্রগড়ে রাহুল গান্ধীর প্রচারসভার মঞ্চে পাঁচ বছর পরে কংগ্রেসে ফিরে এসেছেন একদা রাহুলের ঘনিষ্ঠ দলিত নেতা অশোক তানওয়ার। হুডার সঙ্গে বিবাদেই তিনি দল ছেড়েছিলেন। নিজের দল তৈরি করে, তার পরে তৃণমূল, আম আদমি পার্টি ঘুরে বিজেপিতে যোগ দেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টাতেও তিনি বিজেপির হয়ে প্রচার করেছিলেন। তার ঘণ্টাখানেক পরেই রাহুলের সভায় হাজির হন। আচমকা তাঁকে কংগ্রেসে ফিরতে দেখে হুডার মুখ আরও গোমড়া হয়েছে। শৈলজাও যে খুশি হবেন, এমন সম্ভাবনা কম। কারণ গত লোকসভা ভোটেই তানওয়ার বিজেপির হয়ে সিরসায় শৈলজার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন।

আরও এক জন মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে রয়েছেন। কৈথলে মধ্যরাত অবধি প্রচার করছেন রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ জাঠ নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা। তিনি ভোটে লড়ছেন না। তাঁর ছেলে আদিত্য লড়ছেন। কিন্তু কৈথলের গ্রামে গ্রামে রণদীপের প্রচারে রব উঠছে, ‘হমারা মুখ্যমন্ত্রী ক্যায়সা হো? রণদীপ সুরজেওয়ালা জ্যায়সা হো!’

কৈথলের কংগ্রেস নেতাদের দুপুরের হুঁকো খাওয়ার আড্ডায় যদি প্রশ্ন করেন, কংগ্রেস সরকারে এলে মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা হলে হিসাবটা স্পষ্ট হবে। হরিয়ানার ৯০ আসনের বিধানসভায় যদি কংগ্রেস ৬৫ থেকে ৭০ আসন জেতে, তা হলে কংগ্রেস হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবে, কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন। কারণ, রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদীর বিজেপিকে হারিয়েছে বলে কংগ্রেস প্রচার করবে। আর কংগ্রেস যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ৪৬টির থেকে সামান্য বেশি— ৫০ থেকে ৫৫টি আসন পায়, তা হলে ভূপেন্দ্র সিংহ হুডাই নিশ্চিত মুখ্যমন্ত্রী হবেন। কারণ, তাঁর অনুগামীরাই সিংহভাগ আসনে টিকিট পেয়েছেন। ফলে বিধায়কদের মধ্যেও তাঁর অনুগামীর সংখ্যাই বেশি হবে। তখন হুডা বলতে পারবেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী না হলে বিধায়করা যে কোনও সময়ে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে চলে যেতে পারেন।

রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ নেতারা মনে করছেন, দুই আঞ্চলিক দল জেজেপি ও আইএনএলডি উত্তরপ্রদেশের দুই দলিত নেতা-নেত্রী মায়াবতী ও চন্দ্রশেখর আজ়াদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যদি কংগ্রেসের দলিত ভোট কাটতে না পারে, তা হলে কংগ্রেস বিপুল আসনে জিতে ক্ষমতায় আসবে। আজ রাহুল মহেন্দ্রগড়ের প্রচারে অভিযোগ তুলেছেন, “এই ছোট দলগুলি আসলে বিজেপির বি, সি, ডি, ই টিম হিসেবে কাজ করছে।’’ রাহুল-শিবিরের আশা, শেষ বাজারে দলিত নেতা অশোক তানওয়ার বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে আসায় কংগ্রেস নিজের দলিত ভোট অটুট রাখতে পারবে। রাহুল রাজ্যের নেতাদের না জানিয়ে তানওয়ারকে দলে ফেরানোয় হুডা-শৈলজা দু’জনেই চাপে থাকবেন।

কংগ্রেস সরকারে এলে মুখ্যমন্ত্রী পদেও কি রাহুল এমনই চমক দেবেন? হরিয়ানার ভোটের হাওয়ায় একটা আশঙ্কা ভেসে বেড়াচ্ছে। তা হল, দলের এই গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো তীরে এসে কংগ্রেসের তরী ডুববে না তো?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement