সন্তান খুনে অভিযুক্ত সূচনা শেঠ। ছবি: পিটিআই।
স্রেফ একটি ছুরি, একটি তোয়ালে আর একটি বালিশ। গোয়ার হোটেল থেকে পাওয়া এই ক’টি জিনিসের সূত্র ধরেই একরত্তি সন্তান খুনে অভিযুক্ত বেঙ্গালুরুর মাইন্ডফুল এআই ল্যাব-এর সিইও সূচনা শেঠের কাছে পৌঁছতে পেরেছে পুলিশ!
পুলিশ সূত্রে খবর, গোয়ার ক্যান্ডোলিম বিচে যে হোটেলে ছেলেকে নিয়ে উঠেছিলেন সূচনা, সেই ঘর থেকেই ওই ছুরি, তোয়ালে আর বালিশ উদ্ধার হয়েছে। সূচনা ওই হোটেলে উঠেছিলেন গত ৬ জানুয়ারি। হোটেল ছেড়েছিলেন ৮ জানুয়ারি। ছাড়ার পর হোটেলের এক কর্মী ওই ঘরে গিয়ে রক্তের দাগ লেগে থাকা তোয়ালে উদ্ধার করেন। রাত ১টা নাগাদ সূচনা তড়িঘড়ি হোটেল ছাড়ার সময়েই কর্মীদের সন্দেহ হয়েছিল তাঁর হাবেভাবে। এর পর ঘর সাফের সময় তোয়ালেতে রক্তের দাগ দেখে সেই সন্দেহ তীব্র হওয়ায় পুলিশে খবর দেওয়া হয় হোটেল থেকে। পুলিশকে জানানো হয়, হোটেল বুক করার সময় সূচনার সঙ্গে তাঁর ছোট্ট ছেলে ছিল। কিন্তু বেরোনোর সময় তাকে দেখেননি হোটেলের কর্মীরা। সূচনার হাতে থাকা ভারী ব্যাগটির কথাও হোটেল কর্মীরাই জানিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, তদন্তকারীরা সূচনার সঙ্গে যোগাযোগ করে তোয়ালেতে রক্তের দাগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঋতুস্রাবের কারণে ওই দাগ লেগেছে তোয়ালেতে।
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্যান্ডোলিম বিচের ওই হোটেলের ঘর থেকে একটি ছোট ও একটি বড় কাশির সিরাপের খালি বোতলও উদ্ধার হয়েছে। ছেলের ময়নাতদন্ত করেছেন যিনি, সেই চিকিৎসক জানিয়েছেন সম্ভবত কাশির ওষুধ বেশি পরিমাণে খাইয়ে ছেলেকে বেহুঁশ করে নাকে-মুখে বালিশ, তোয়ালে চাপা দিয়ে বা তার জাতীয় কিছু গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। ছেলের দিক থেকে প্রতিরোধের কোনও চেষ্টাই চোখে পড়েনি চিকিৎসকের। তার পরে সম্ভবত হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন সূচনা। কিন্তু পরে মন বদলান। সেখান থেকে তাঁর হাতে ক্ষত হয়ে থাকতে পারে। তবে খুনের কথা এখনও স্বীকার করেননি গোয়ার মাপুসা জেলে বন্দি মা। বার বার বলছেন, ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান ছেলে মারা গিয়েছে।
কর্নাটকে ছেলের দেহ-সহ ধরা পড়া সূচনাকে ট্রানজিট রিমান্ডে গোয়ায় নিয়ে আসা হয়েছে। ছ’দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে তাঁকে। পুলিশ সূত্রে খবর, বেঙ্গালুরুতে যে সংস্থার সিইও সূচনা, সেটির স্থায়ী কোনও অফিস ঘরের সন্ধান মেলেনি। এখনকার বহু স্টার্ট আপ সংস্থার মতো ভাগের কোনও জায়গা থেকে সেটির কাজকর্ম চালানো হত বলে মনে করা হচ্ছে। বেঙ্গালুরুর যে এলাকায় সম্প্রতি সূচনা থাকতেন, সেখানের প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরে সূচনা বা তাঁর ছেলেকে কেউ দেখেননি। এর বেশি তাঁরা কেউ কিছু জানেন না।