পুরী-হাওড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ফাইল চিত্র।
প্রতীক্ষার অবসান। হাওড়া থেকে এ বার ট্রেনপথে বাঙালির অন্যতম প্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য পুরী পৌঁছতে মাত্র সাড়ে ৬ ঘণ্টা সময় লাগবে। বৃহস্পতিবার পুরী স্টেশন থেকে প্রথম বারের জন্য হাওড়ার উদ্দেশে রওনা দিল বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। নিজে পুরী স্টেশনে না থাকলেও ভার্চুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পর্দার ওপার থেকেই প্রথামাফিক সবুজ পতাকা নেড়ে পুরী-হাওড়া বন্দে ভারতের প্রথম যাত্রার সূচনা করেন মোদী। তবে পুরী স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এবং আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান।
বৃহস্পতিবার রাজ্যের দ্বিতীয় এবং ওড়িশার প্রথম বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করে মোদী বলেন, “ওড়িশা এবং বাংলার মানুষ উপহার পেলেন। যখন বন্দে ভারত এক স্থান থেকে আর এক স্থানে যায়, তখন তা দেশের উন্নয়নের গতির কথাই তুলে ধরে।” স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এই প্রসঙ্গে মোদীর সংযোজন, “এটা অমৃতকাল। এই সময় দেশের একতাকে আরও বৃদ্ধি করতে হবে। সেই একতার শক্তি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের মধ্যেও দেখা যায়।” ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “পুরী-ভারত বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে হওয়ায় আমরা খুশি।” জগন্নাথ মন্দিরকে কেন্দ্র করে একটি বিমানবন্দর তৈরি করার বিষয়েও তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা হয়েছে বলে জানান নবীন। রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে করে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা নাগাদ হাওড়ায় আসবেন রেলমন্ত্রী। হাওড়া স্টেশনে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।
হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত চলাচল করা রাজ্যের প্রথম বন্দে ভারতের উদ্বোধন নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল। হাওড়া স্টেশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। মাতৃবিয়োগের কারণে অবশ্য সশরীরে হাজির না থেকে সে বারেও ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। স্লোগানকাণ্ডে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীর মানভঞ্জনে এগিয়ে আসেন রেলমন্ত্রী এবং রেলের অন্য পদস্থ কর্তা। এ বারে অবশ্য বিতর্কহীন ভাবেই পথচলা শুরু করল বন্দে ভারত।
গত ২৮ এপ্রিল সকালে হাওড়া-পুরী বন্দে ভারতের প্রথম মহড়া যাত্রা শুরু হয়। সকাল ৬টা ১০ মিনিটে হাওড়া স্টেশনের নিউ কমপ্লেক্স থেকে পুরীর উদ্দেশে রওনা দেয় ট্রেনটি। ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় পুরী পৌঁছয় ট্রেনটি। এর পর দুপুরেই পুরী থেকে রওনা দিয়ে রাত ৮টার মধ্যেই হাওড়া পৌঁছয় বন্দে ভারত। অর্থাৎ, একই দিনে পুরী গিয়ে ঘুরে আসা যাবে। বন্দে ভারতে পুরী গেলে সময় অনেকটাই কম লাগবে। মাত্র সাড়ে ৬ ঘণ্টাতেই হাওড়া থেকে পুরী পৌঁছনো যাবে। শনিবার থেকে সপ্তাহে কেবল বৃহস্পতিবার বাদে রোজ চলবে বন্দে ভারত।
এখন পুরী যাওয়ার জন্য হাওড়া এবং শিয়ালদহ স্টেশন থেকে যে সমস্ত দূরপাল্লার ট্রেন চলাচল করে, সেখানে সময় লাগে প্রায় ৮ ঘণ্টা। বন্দে ভারতে গেলে অনেকটাই সময় বাঁচবে। হাওড়া-পুরী শাখায় বন্দে ভারতের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৭৭ কিমি। সর্বোচ্চ বেগ হবে ঘণ্টায় ১৩০ কিমি। হাওড়া থেকে ছেড়ে পুরীগামী বন্দে ভারত প্রথম দাঁড়াবে খড়্গপুরে। তার পর বালেশ্বর, ভদ্রক, জাজপুর, কেওনঝড়, কটক, ভুবনেশ্বর, খুরদা রোড স্টেশনে দাঁড়াবে এই ট্রেনটি।