প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাহুল গান্ধী। ফাইল চিত্র।
সাম্প্রতিক লন্ডন সফরে গিয়ে ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে রাহুল গান্ধীর করা বিতর্কিত মন্তব্যের প্রায় এক সপ্তাহ পরে পাল্টা আক্রমণ শানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ কর্নাটকের হুবলিতে সরকারি অনুষ্ঠানে রাহুলের নাম না-করেই মোদী বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, লন্ডনের মাটি থেকে ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।’’ কর্নাটকবাসীকে ‘এই ধরনের মানুষদের’ থেকে দূরে থাকার পরামর্শও দেন তিনি। কংগ্রেসের পাল্টা প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রীর নীতির সমালোচনা করাটা কবে থেকে দেশের সমালোচনা হয়ে গেল? আজ মোদী এ-ও বলেন, বিরোধীরা তাঁর মৃত্যু কামনা করে চলেছেন। কিন্তু দেশের মা-বোনেদের রক্ষাকবচ রয়েছে তাঁর।
বিজেপির অভিযোগ, লন্ডনে গিয়ে ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিদেশি হস্তক্ষেপ চেয়ে বসেছিলেন রাহুল। সেই অভিযোগ উড়িয়ে কংগ্রেস বলেছে, ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন ওঠা সত্ত্বেও ইউরোপ-আমেরিকার মতো নিজেদের ‘গণতন্ত্রের রক্ষাকর্তা’ বলে দাবি করা দেশগুলির নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাহুল। তবে তিনি স্পষ্ট বলেছিলেন, ওই সমস্যা ভারতের। তার সমাধান ভারতকেই করতে হবে। কংগ্রেস শিবিরের দাবি, বর্তমান সরকারের আমলে দেশের সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপদের। সেই বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন রাহুল। এ যাবৎ বিজেপির অন্য নেতারা এই নিয়ে রাহুলকে আক্রমণ করলেও আজ প্রথম বার মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। হুবলির অনুষ্ঠানের মঞ্চে মোদী বলেন, ‘‘আজ ভগবান বাসবশ্বেরের মাটিতে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিশ্ববাসীর কাছে আজও শিক্ষণীয়। লন্ডনে সেই বাসবেশ্বরের মূর্তির উদ্বোধনে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। দুর্ভাগ্যের হল, সেই লন্ডনের মাটি থেকে ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। ধারাবাহিক প্রয়াস চললেও কোনও শক্তির পক্ষে দেশের গণতন্ত্রের ভিতকে দুর্বল করা সম্ভব নয়। যাঁরা ওই কাজ করছেন, তাঁরা বাসবেশ্বরের সঙ্গে কর্নাটকের মানুষকেও অপমান করছেন।’’
মোদীর এই মন্তব্যের পরে কংগ্রেস নেতা পবন খেরা বলেন, ‘‘শ্রীযুক্ত প্রধানমন্ত্রী, আপনি গণতন্ত্রকে আক্রমণ করছেন বলেই তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’’ কেমব্রিজের পড়ুয়াদের সামনে গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রকেই মজবুত করার প্রয়াস বলে দাবি করেন পবন। টুইটারেও তিনি লেখেন, ‘আপনার সমালোচনা করাটা কবে থেকে দেশের সমালোচনা হয়ে গেল? আপনি প্রধানমন্ত্রী মাত্র। দেশ, ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা নন।’
বছরের মাঝামাঝি কর্নাটকে বিধানসভা নির্বাচনে। প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা, নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ কলহে দক্ষিণী রাজ্যে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে বিজেপি। কিন্তু লোকসভার আগে কর্নাটকে জিততে মরিয়া মোদী। সেই লক্ষ্যে গত দু’মাসে আজ ছিল তাঁর পঞ্চম কর্নাটক সফর। আজ সকালে প্রথমে কর্নাটকের মাণ্ড্যতে ৮৪৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি বেঙ্গালুরু-মাইসুরু জাতীয় সড়কের উদ্ধোধন করেন মোদী। সেখানে বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, ‘‘বিরোধীরা বলছে, মোদী তোমার কবর খোঁড়া হচ্ছে।’’ আসন্ন লোকসভায় ‘ব্যক্তি’ মোদীর ভাবমূর্তিকে হাতিয়ার করে তৃতীয় বার ক্ষমতা দখলের কৌশল নিয়েছে বিজেপি। রাজনীতির অনেকের মতে, তাঁকে পরাস্ত করতে বিরোধীরা ঘৃণার রাজনীতি করছে বলে আমজনতার সহানুভূতি কুড়োনোও এখন মোদীর অন্যতম কৌশল। উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যে ভোটের ফল ঘোষণার দিনেও নিজের বক্তৃতায় মোদী বলেছিলেন, কংগ্রেস তথা বিরোধীরা তাঁর মৃত্যু কামনা করে চলেছে। আজ সড়ক উদ্বোধনের মঞ্চেও প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘কংগ্রেস আমার কবর খোঁড়ার স্বপ্নে মশগুল। কিন্তু তারা জানে না, দেশের মানুষ, মা-বোনেদের ভালবাসা আমার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। ওরা যখন কবর খুঁড়তে ব্যস্ত, তখন আমি বেঙ্গালরু-মাইসুরু সড়ক তৈরি করেছি। ব্যস্ত রয়েছি দেশের গরিব মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে।’’