Narendra Modi on China

মতানৈক্য থাকতেই পারে, কিন্তু ঝগড়া নয়! শৈত্য মেনেও মোদী ভারত-চিন সমীকরণ বোঝাতে টানলেন পরিবারের রসায়ন

২০২০ সালে লাদাখে গালওয়ান সীমান্তে সংঘর্ষের পর থেকে ভারত এবং চিনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে শৈত্য তৈরি হয়। গত বছরে মোদী এবং জিংপিংয়ের সদর্থক বৈঠকের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ ২২:৪৪
Share:

২০২৪ সালের অক্টোবরে রাশিয়ার কাজ়ানে ব্রিকস্‌ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং। —ফাইল চিত্র।

একটি পরিবারের মধ্যেও সব সময় সব কিছু নিখুঁত থাকে না। ভারতের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক বোঝাতে গিয়ে এমনটাই বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মার্কিন পডকাস্টার ফ্রিডম্যানকে সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। রবিবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় তিন ঘণ্টার ওই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে ভারত এবং চিনের কূটনৈতিক টানাপড়নের কথাও। সীমান্ত নিয়ে চিনের সঙ্গে গত পাঁচ বছরের শৈত্য মেনে নিয়েও প্রধানমন্ত্রী জানালেন, নয়াদিল্লি এবং বেজিংয়ের সম্পর্ক ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে। মোদীর বক্তব্য, দুই দেশের মধ্যে মতানৈক্য থাকতেই পারে, কিন্ত তা যেন বিবাদের পর্যায়ে না পৌঁছে যায়।

Advertisement

বস্তুত, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) পেরিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছিল চিনা ফৌজের বিরুদ্ধে। উত্তেজনার আবহে ওই বছরের ১৫ জুন গালওয়ানে চিনা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় সেনা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় জওয়ানদের পাল্টা হামলায় বেশ কয়েক জন চিনা সেনাও নিহত হয়েছিলেন। সেখান থেকেই দু’দেশের সম্পর্কে কিছুটা শীতলতা তৈরি হয়েছিল। গালওয়ান-কাণ্ডের পর থেকেই কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনে দফায় দফায় বৈঠক শুরু হয়েছিল। শেষে গত বছর অক্টোবরে রাশিয়ার কাজ়ানে ব্রিক্‌স শীর্ষ সম্মেলনের সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকে সীমান্ত থেকে সেনা সরানোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছোয় দুই দেশ।

মার্কিন পডকাস্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদী জানান, ভারত আবার চিনের সঙ্গে গালওয়ান-কাণ্ডের আগের মতোই সম্পর্ক তৈরি করতে চায়। তাঁর বিশ্বাস, দু’দেশের তরফেই একে অন্যের প্রতি আস্থা এবং আগ্রহ আবার ফিরে আসবে। তবে, মাঝে প্রায় পাঁচ বছরের ব্যবধান তৈরি হওয়ার জন্য এই প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে করছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা ঠিক যে আমাদের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে। ২০২০ সালে সীমান্তে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি হয়েছিল। তবে (চিনের) প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আমার বৈঠকের পরে, সীমান্তে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে দেখেছি।”

Advertisement

ভারত এবং চিনের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা গোটা বিশ্বের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রেও অপরিহার্য মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, একবিংশ শতাব্দী হল এশিয়ার (উন্নতির) শতাব্দী। এই সময়ে ভারত এবং চিনের মধ্যে একটি সুস্থ এবং স্বাভাবিক প্রতিযোগিতায় আপত্তি নেই মোদীর। তাঁর কথায়, “প্রতিযোগিতা থাকা খারাপ বিষয় নয়, তবে সেটি যেন কখনওই সংঘাতে পরিণত না হয়।” ভারত এবং চিনের মিলিত জিডিপি বিশ্বের মোট জিডিপির ৫০ শতাংশ, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন মোদী। চিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের সম্পর্ক ভবিষ্যতেও একই রকম শক্তিশালী থাকা উচিত। এটি আরও বৃদ্ধি পাওয়া উচিত। মতপার্থক্য অবশ্যই রয়েছে এবং তা স্বাভাবিক। দু’টি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে মাঝেমধ্যে মতবিরোধ হতে থাকে। এমনকি একটি পরিবারের মধ্যেও, সব কিছু সব সময় নিখুঁত থাকে না। তবে আমরা চাই, এই মতানৈক্যগুলি যেন বিবাদে পরিণত না হয়। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করি।” প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ভারত সেই কারণেই আলোচনার উপর জোর দেয়। কারণ আলোচনার মাধ্যমেই একটি স্থিতিশীল এবং সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement