CPM

কমিটি ভাঙা-গড়ার ভার জেলাকেই দিচ্ছে সিপিএম

সরকারে আসার পরে রাজ্যে দল বড় হতে শুরু করায় ১৯৮৫ সালে সিপিএমে চালু হয়েছিল জ়োনাল কমিটির ব্যবস্থা। শাখার উপরে এবং জেলার নীচে তখন থেকে লোকাল ও জ়োনাল, এই দ্বিস্তরীয় কমিটি ছিল।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫ ০৮:২৯
Share:

— প্রতীকী চিত্র।

সংগঠনে ৯ বছর আগে উঠে যাওয়া ব্যবস্থা আবার ফিরে আসতে পারে সিপিএমে। জেলা কমিটির নীচে কী ধরনের কমিটি থাকবে, সেই পুনর্বিন্যাসের দায়িত্ব এ বার জেলার হাতেই ছেড়ে দিচ্ছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

সরকারে আসার পরে রাজ্যে দল বড় হতে শুরু করায় ১৯৮৫ সালে সিপিএমে চালু হয়েছিল জ়োনাল কমিটির ব্যবস্থা। শাখার উপরে এবং জেলার নীচে তখন থেকে লোকাল ও জ়োনাল, এই দ্বিস্তরীয় কমিটি ছিল। ক্ষমতা হারানোর পরে লোকবল কমে দল ছোট হতে শুরু করার পরে ২০১৬ সালে কলকাতায় রাজ্য সিপিএমের সাংগঠনিক প্লেনামে লোকাল ও জ়োনাল কমিটি তুলে দিয়ে শুধু এরিয়া কমিটি রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু এরিয়া কমিটি নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে নানা সমস্যার কথা গত দু’বছর ধরে তুলেছেন বিভিন্ন জেলার নেতৃত্ব। সিপিএমের সদ্য হয়ে যাওয়া রাজ্য সম্মেলনেও বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল। সূত্রের খবর, কমিটি পুনর্বিন্যাস করে আবার জ়োনাল ফিরিয়ে আনা হবে কি না, তার পরিধি কী হবে, সে সব ঠিক করার ভার জেলার উপরেই ছেড়ে দিতে চেয়ে ‘নোট’ দিয়েছে রাজ্য সিপিএম। অর্থাৎ কমিটির ক্ষেত্রে এর পরে রাজ্য জুড়ে আপাতত কেন্দ্রীয় কোনও ব্যবস্থা না-ও থাকতে পারে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কাঠামো অনুযায়ী, শাখা ও জেলা কমিটির মাঝে কী ভাবে কোন কমিটি থাকবে, তা সংশ্লিষ্ট রাজ্যকেই ঠিক করতে হয়।

সিপিএম সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনা, বর্ধমান পূর্ব, মুর্শিদাবাদের মতো কয়েকটি বড় জেলা জ়োনাল ব্যবস্থায় দ্রুত ফেরত যেতে চায়। কিছথু জেলা আরও একটু অপেক্ষা করার পক্ষপাতী। নীতিগত ভাবে বর্তমান ব্যবস্থা বদলের বিপক্ষে রয়েছে কলকাতা জেলা। তাদের যুক্তি, সিপিএমের সাংগঠনিক স্তরে এখন এত লোক নেই, যা দিয়ে লোকাল ও জ়োনাল কমিটির দু’টি স্তর সামলানো যায়।

লোকাল ও জ়োনাল কমিটি উঠিয়ে দেওয়ার সময়ে সিপিএমের তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মত ছিল, শাখা ও জেলার মাঝে একটিই কমিটি থাকলে নেতারা আরও বেশি করে নিচু তলায় গিয়ে সংগঠনের কাজ করতে পারবেন। কিন্তু মহম্মদ সেলিম রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পরে ২০২৩ সালের নভেম্বরে হাওড়ায় দলের রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশনে একাধিক জেলার নেতারা এরিয়া কমিটিকে ঘিরে নানা বিভ্রান্তি ও সমন্বয়ের সমস্যার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। তার পরবর্তী সময়েও জেলার নেতারা দলে জানিয়েছেন, গণ-সংগঠনে ব্লক স্তরে কমিটি আছে। কিন্তু দলের ক্ষেত্রে এক ব্লকে একাধিক এরিয়া কমিটির ‘এক্তিয়ার’ চলে আসছে। তার জেরে আন্দোলন বা কর্মসূচির ক্ষেত্রে গণ-সংগঠনের সঙ্গে দলের সমন্বয়েও সমস্যা হচ্ছে। তার সঙ্গেই অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, শুধু এরিয়া কমিটি থাকায় অনেকেই কমিটির বাইরে থাকছেন। তাঁদের আর কাজে ‘দায়বদ্ধ’ রাখা যাচ্ছে না। লোকাল ও জ়োনাল থাকলে আরও বেশি লোককে কমিটির সঙ্গে রাখা সম্ভব।

এই বিতর্কের মধ্যেই সিপিএমের অন্দরে একাংশের প্রস্তাব, এরিয়া কমিটির অঞ্চল আরও ছোট করে দেওয়া হোক। তার উপরে বিধানসভা ধরে কমিটি রাখা হোক। তাতে নির্বাচনের সময়ে কাজ করার সুবিধা হবে। এক বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে একাধিক কমিটির ভাগ থাকায় সমন্বয়ের সমস্যাও থাকবে না। তবে এই প্রস্তাবে আনুষ্ঠানিক সিলমোহর এখনও পড়েনি। কমিউনিস্ট পার্টি কেন ভোট-মুখী সংগঠন করবে, পাল্টা এই তাত্ত্বিক প্রশ্নও দলে আছে!

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘সম্মেলনের সময়ে এ বার এরিয়া কমিটি এমন ভাবেই করা হয়েছে, যাতে পুনর্বিন্যাস করা যায়। যে জেলা যেটায় সুবিধা মনে করবে, সেই ভাবেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন