প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
ভোটপ্রচারের ডাক পড়লেই তিনি পৌঁছে যাবেন— বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে ভোটমুখী রাজ্যগুলির প্রতিনিধিদের এই বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
চলতি বছরে জম্মু-কাশ্মীর এবং ন’রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। পরের বছর লোকসভা নির্বাচন। তাই বিধানসভাগুলিতে ভাল ফল করে টানা তৃতীয়বার দিল্লির মসনদ দখলকে ‘পাখির চোখ’ করেছেন মোদী। কর্মসমিতির বৈঠকে আসা ভোটমুখী রাজ্যগুলির প্রতিনিধিদের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দলের স্বার্থে ভোটের প্রচারে যেতে তিনি সব সময়ই প্রস্তুত। যে রাজ্যের যখন প্রয়োজন হবে, তখন যেন তাঁকে সেই রাজ্যে প্রচারে যাওয়ার জন্য ডেকে নেওয়া হয়। তাঁর যেতে কোনও সমস্যা নেই। মোদী ভাল করেই জানেন, প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া রুখতে দলের সেরা বাজি তিনিই। অতীতেও দেখা গিয়েছে, যে রাজ্যে দলের অবস্থা কিছুটা দুর্বল, সেই রাজ্যে ধারাবাহিক ভাবে প্রচার চালিয়ে সাফল্য এনে দিয়েছেন মোদী।
দলের এক কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের কথায়, ‘‘এ বার গুজরাতেও নির্বাচনের প্রথম দিকে দলকে বেশ নড়বড়ে দেখাচ্ছিল। ২৭ বছরের প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া, তার উপরে ভোটের ঠিক আগে মোরবীতে সেতু দুর্ঘটনার কারণে দল যখন কিছুটা ব্যাকফুটে তখন হাল ধরেন মোদী। বাকিটা ইতিহাস।’’
কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, গত কালের বৈঠকে মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, শুধু গুজরাত নয়, অন্য রাজ্যেও দলকে জেতাতে তিনি মরিয়া। তাই কোনও রাজ্যে ভোটপ্রচারে একাধিকবার তাঁকে প্রয়োজন হলে, সেখানে যেতে কোনও সমস্যা নেই তাঁর।
এই আশ্বাস দিতে গিয়ে রাজ্যে রাজ্যে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মোদী। নিজের রাজ্যের উদাহরণ টেনে তাঁর পরামর্শ, গুজরাতে বিজেপির যেমন একেবারে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত সংগঠন রয়েছে, তেমনই প্রতিটি রাজ্যে একেবারে নিচুতলা পর্যন্ত সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।
আগামী এক বছর দেশে বেশ কয়েকটি বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই রাজনৈতিক গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডাকে না সরিয়ে তাঁর মেয়াদকাল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় দল। তেমনি ভোটমুখী কোনও রাজ্যেই আপাতত কোনও সাংগঠনিক নির্বাচন বা রদবদল হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বর্তমানে যে রাজ্য নেতৃত্ব দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁরাই বিধানসভা নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত রাজ্যের দায়িত্ব সামলাবেন। ভোটের ঠিক আগে রাজ্যস্তরে সাংগঠনিক রদবদল করে কোনও ধরনের অস্থিরতা তৈরির পক্ষপাতী নন কেন্দ্রীয় নেতারা। পরিবর্তে রাজ্য নেতৃত্বকে ভোটের প্রস্তুতিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছে দল।
প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ, বিশেষ করে সংখ্যালঘু, গরিব, যুব ও মহিলাদের কাছে গিয়ে সরকারের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরতে হবে। সেই লক্ষ্যে রাজ্য নেতৃত্বকে কোমর কষে নামার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিজেপি সূত্রের খবর, বিরোধীদের প্রচারে আমজনতা যাতে বিভ্রান্ত না হন, সেই জন্য কর্মীদের জনসংযোগ বৃদ্ধি এবং সংগঠনকে বাড়ানোর ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন পদ্ম শিবিরের শীর্ষ নেতারা।
বিজেপির দু’দিনের কর্মসমিতির বৈঠকে রাজ্য নেতৃত্বগুলিকে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট সময় বেঁধে সমাজের প্রান্তিক শ্রেণি ও মহিলাদের কাছে পৌঁছতে হবে। সূত্রের মতে, সেই কাজের অগ্রগতি কতটা হল তা ধারাবাহিক ভাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে রিপোর্ট আকারে পাঠাবে রাজ্যগুলি।