Modi on Uniform Civil code

চাই ধর্মনিরপেক্ষ দেওয়ানি বিধি! স্বাধীনতা দিবসে মোদী বললেন, যা দেশ ভাগ করে, সমাজে তার জায়গা নেই

লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি তাদের অঙ্গীকারপত্রে উল্লেখ করেছিল অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথা। ইতিমধ্যেই দেশের বেশ কিছু বিজেপি শাসিত রাজ্য ওই বিধি চালুও করেছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৪ ১৩:২৮
Share:

লাল কেল্লায় বক্তৃতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবসের সকালে। ছবি: পিটিআই।

স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লার বক্তৃতা মঞ্চ থেকে দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার পক্ষে সওয়াল করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘যে আইন দেশকে ভাগ করে, আধুনিক সমাজে তার স্থান থাকতে পারে না। সমাজ থেকে সেই আইনকে দ্রুত ঝেড়ে ফেলা উচিত।’’

Advertisement

অভিন্ন দেওয়ানি বিধি হল সব ধর্মের মানুষের জন্য বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, জমি-সম্পত্তি এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত এক এবং অভিন্ন আইন। যা কেন্দ্রের দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চালু করার চেষ্টা করে এসেছে মোদী সরকার। আর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রথম থেকে বিরোধিতা করে আসছে ওই আইনের। তাদের দাবি, ওই আইন চালু করে দেশের বিভিন্ন ধর্মের নিজস্ব আচার আচরণে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে মোদী সরকার। নষ্ট করতে চাইছে বিভিন্ন ধর্মের স্বকীয়তা। বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লার মঞ্চ থেকে বক্তৃতায় মোদী বিরোধীদের সেই প্রচারেরই জবাব দিয়েছেন অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ দেওয়ানি বিধি’ বলে উল্লেখ করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া দরকার। প্রত্যেকে তাঁদের মতামত জানাবেন। তার পরেই দেশে ধর্মীয় বৈষম্য তৈরি করা এই আইনকে আমরা ঝেড়ে ফেলব। এই সময়ে দেশের প্রয়োজন একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেওয়ানি বিধি। একমাত্র তা হলেই আমরা ধর্মীয় ভেদাভেদকে তাড়াতে পারব।’’

বৈষম্য প্রসঙ্গ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং সংবিধানের কথাও উল্লেখ করে মোদী বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট বার বার এই নিয়ে আলোচনা করেছে। নির্দেশ দিয়েছে। তার কারণ দেশের জনগণের একটি বড় অংশ মনে করেন এবং ঠিকই মনে করেন যে, বর্তমানে এই সংক্রান্ত যে আইন দেশে চালু আছে, সেটি সাম্প্রদায়িক এবং বৈষম্যমূলক। সংবিধান এই বৈষম্য দূর করার কথা বলেছে, সুপ্রিম কোর্ট বলেছে। এমনকি, যাঁরা সংবিধান তৈরি করেছিলেন, তাঁদেরও স্বপ্ন ছিল (এই বৈষম্য দূর করা)। তাই সেই স্বপ্ন পূরণ করা আমাদের কর্তব্য।’’

Advertisement

লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি তাদের অঙ্গীকারপত্রে উল্লেখ করেছিল অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথা। ইতিমধ্যেই উত্তরাখণ্ডে ওই বিধি সংক্রান্ত বিল পাশ হয়েছে। আরও কয়েকটি বিজেপি শাসিত রাজ্যে এ ব্যাপারে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। যদিও বাংলার শাসক তৃণমূল ওই বিধির বিরোধী। বিরোধিতা করেছে কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও। বৃহস্পতিবার মোদীর বক্তৃতার পরে কংগ্রেস নেতা সলমন কুরশিদও বলেন, ‘‘সংবিধান সব কিছুর উপরে। উনি যা খুশি বলতে পারেন। শেষ পর্যন্ত সংবিধানে যা বলা আছে তাই হবে।’’ যদিও মোদীর বক্তব্যে অনেকেই মনে করছেন, দেশের বাকি রাজ্যগুলিতেও এই আইন চালু করার ব্যাপারে সচেষ্ট হবে কেন্দ্রের এনডিএ সরকার।

প্রসঙ্গত, উত্তরাখণ্ডে প্রস্তাবিত বিধির খসড়ায় বলা হয়েছে, ধর্মনির্বিশেষে পুরুষদের বহুবিবাহ বন্ধ এবং একত্রবাস নথিভুক্ত করার আইনের কথা বলা হয়েছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি অনুযায়ী, যদি কোনও যুগল ‘একত্রবাস’ বা ‘লিভ-ইন’ করতে চান, তবে অবশ্যই পুলিশ বা জেলা আধিকারিকদের অনুমতি নিতে হবে। আর যদি তাঁদের বয়স ২১ বছরের নীচে হয়, তবে বাবা-মায়ের সম্মতির প্রয়োজন। ধর্মনির্বিশেষে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ‘রেজিস্ট্রি বিবাহ’ বাধ্যতামূলক করার কথাও বলা হয়েছে এই বিধিতে। কোনও যুগল ‘লিভ-ইন’ করতে চাইলে প্রথমেই তাঁদের নাম পুলিশের কাছে নথিভুক্ত করতে হবে। ‘লিভ-ইন’ সম্পর্কের ‘ঘোষণাপত্র’ সঙ্গে রাখতে হবে সঙ্গে। প্রয়োজনে তা দেখাতে ব্যর্থ হলে যুগলের ২৫ হাজার টাকার জরিমানা এবং তিন মাসের জেল হতে পারে। ‘লিভ-ইন’ সম্পর্কে থাকা যুগলের যদি সন্তান হয়, তবে সেই শিশুরা আইনি স্বীকৃতি পাবে।

বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও রাজ্যের সকলের জন্য একই নিয়ম বলবৎ করার কথা আছে এই বিলে। দম্পতিকে নির্দিষ্ট সময় ‘কুলিং অফ পিরিয়ড’-এ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে এই বিলে সন্তান দত্তক নেওয়ার নিয়ম আরও সহজ করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও সম্পত্তির ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়েদের সমান অধিকার থাকবে। জন্ম দেওয়া সন্তান এবং দত্তক নেওয়া সন্তান— দু’জনেই সম্পত্তির ক্ষেত্রে সমানাধিকারী হবে। একাধিক বিজেপিশাসিত রাজ্য উত্তরাখণ্ড সরকারের ওই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement