ফাইল চিত্র।
বাস্তুতে গড়বড়। তাই প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েই সরকারি বাসভবনের বাস্তু বদলে ফেলেছিলেন তিনি! মুখ্যমন্ত্রী-নিবাসকে বাস্তু উপযোগী করতে খরচ হয়েছিল ৫০ কোটি। শুধু তাই নয়, জ্যোতিষীর নিদানে রাতারাতি উচ্চতা বাড়ানো হয়েছিল বেগমপেটের দলীয় দফতরের। কারণ, জ্যোতিষীদের মতে ‘কর্তার’ স্থান হওয়া উচিত সবার উপরে। এর পর দফতরের শীর্ষ তলাটি নির্ধারিত হয় মুখ্যমন্ত্রীর জন্য। পরিবারবাদের অভিযোগ তো ছিলই, আজ তেলঙ্গানার মাটিতে দাঁড়িয়ে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের জ্যোতিষ-চর্চার তীব্র সমালোচনা করে সরব হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব বিজনেস’-এর বিশ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হায়দরাবাদ গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এক কাজে গিয়ে দুই কাজ সারলেন তিনি। আগামী বছর তেলঙ্গানায় বিধানসভা নির্বাচন। ভোট লক্ষ্য করে আজ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করার কৌশল নেন প্রধানমন্ত্রী। হায়দরাবাদের বিমানবন্দর চত্বরে দলীয় কর্মিসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে গান্ধী পরিবারের সঙ্গে একাসনে বসিয়ে কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের পরিবারভিত্তিক রাজনীতির তীব্র সমালোচনা করেন মোদী। আক্রমণে বাড়তি হাতিয়ার হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বাস্তু ও জ্যোতিষে বিশ্বাসী কে চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর)-কে কটাক্ষ করে মোদী বলেন, ‘‘কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তি কখনই রাজ্যের উন্নতিসাধন করতেপারেন না।’’
নীতিগত ভাবে বরাবরই পরিবারবাদ রাজনীতির বিপক্ষে বিজেপি নেতৃত্ব। সেই কারণে প্রায়শই গান্ধী পরিবারের পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা যায় তাঁদের। বিজেপির অভিযোগ, পরিবারবাদের প্রশ্নে পিছিয়ে নেই তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও-ও। পিতা মুখ্যমন্ত্রী এবং পুত্র ও ভাগ্নে সেই মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। মেয়ে বিধান পরিষদের সদস্য। বিজেপির দলীয় সভাপতি জেপি নড্ডার মতে, পরিবারভিত্তিক দলগুলিই হল দেশের গণতন্ত্রের প্রধান শত্রু। এরা নিজেদের ও পরিবারের স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে পিছপা হন না। একই সুরে প্রধানমন্ত্রীও এ দিন বলেছেন, ‘‘পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির কারণেই উৎসাহী যুবকেরা রাজনীতিতে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। কারণ পরিবারের সদস্যরা দলের সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখায় আগ্রহী যুবকেরা বঞ্চিত হচ্ছেন।’’
কেসিআরের ‘কুসংস্কার’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে যোগী আদিত্যনাথের প্রসঙ্গ টেনে আনেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী বলেন, ‘‘যোগী সাধু। কিন্তু কুসংস্কারাচ্ছন্ন নন। বরং আমার মতোই যোগী আস্থারাখেন বিজ্ঞানে।’’
ভারতীয় রাজনীতিতে অবশ্য বেশির ভাগ নেতানেত্রীকেই কম-বেশি নানা সংস্কার মানতে দেখা যায়। কিন্তু বিরোধীদের মতে, এ ব্যাপারে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন কেসিআর। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই প্রথমে বদলানো হয় বাসভবন। তার পর সেই ভবনে পাঁচ দিন ব্যাপী যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন কেসিআর। তাতে ফি দিন পাত পড়েছিল ১০ হাজার লোকের। ৫০ হাজার লোক খাওয়াতে খরচ হয় প্রায় সাত কোটি টাকা। অভিযোগ সেই টাকা জুগিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। বিরোধীদের দাবি, সময়ের আগে তেলঙ্গানাতে বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার পিছনেও জ্যোতিষীদের পরামর্শ ছিল। কেসিআরের কাছে শুভ সংখ্যা ৬। সে কারণে ২০১৮ সালে প্রায় নয় মাস আগে ৬ সেপ্টেম্বর রাজ্যে বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নির্বাচন ঘোষণা করেছিলেন তিনি। সে বছরের ডিসেম্বর মাসে জিতে এসে ফের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন কেসিআর। শপথের সময় ছিল ১২.৫৭ মিনিট। যা যোগ করলে হয় ১৫। ওই দুই সংখ্যা আবার যোগ করলে হয় ৬।