বাসবরাজ বোম্মাই, নরেন্দ্র মোদী, জয়রাম ঠাকুর। ফাইল চিত্র।
উত্তরে হিমাচলপ্রদেশ থেকে দক্ষিণে কর্নাটক। উপনির্বাচনে বিজেপির হারের ধারা অব্যাহত। এ দিকে দুই রাজ্যেই বিধানসভা নির্বাচন ক্রমশ এগিয়ে আসছে। তাই রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে আজ কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইকে দিল্লি ডেকে পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দিল্লি আসার ডাক পেয়েছেন হিমাচলপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুরও। আজ বৈঠকের পরে বোম্মাই ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তিনি যা ইঙ্গিত পেয়েছেন, তাতে তাঁর গদি আপাতত সুরক্ষিত। কিন্তু তিনটি বিধানসভা ও একটি লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের কাছে হেরে যাওয়া জয়রাম ঠাকুরের পক্ষে এ যাত্রা গদি বাঁচানো বেশ শক্ত বলেই মনে করছেন বিজেপির নেতারাই। সূত্রের মতে, খুব দ্রুত মন্ত্রিসভায় রদবদল হতে পারে হিমাচলে।
আগামী বছরের ডিসেম্বর মাসে গুজরাতের সঙ্গেই ভোট হওয়ার কথা রয়েছে হিমাচল প্রদেশে। আর এ মাসের শুরুতে তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন ও মান্ডি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীর হার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুরের ভবিষ্যত নিয়ে। বিজেপির এক নেতার কথায়, রাজ্যে ৬৮টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। যার মধ্যে মান্ডি লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে ১৭টি বিধানসভা রয়েছে। সেই ১৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮টি কেন্দ্রে কংগ্রেস জয় ছিনিয়ে নেয়। জনমতসংগ্রহকারী সংস্থা সি ভোটার জানিয়েছে, তারা উপনির্বাচনের আগে যে জনমত সংগ্রহ করেছিল, তাতে সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের তীব্র ক্ষোভের আভাস ছিল। ভোটের ফলাফল সেই পূর্বাভাসকেই বাস্তবে রূপ দিয়েছে।
বিরোধীদের মতে, মূল্যবৃদ্ধি, আপেল চাষিদের ফসলের দাম না পাওয়া, কাজ হারানোর মতো বিষয়গুলি নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমা হচ্ছিল জনমানসে। উপনির্বাচনে তারই প্রতিফলন হয়েছে। চারটি কেন্দ্রেই মানুষ বেছে নিয়েছেন কংগ্রেসকে। মূল্যবৃদ্ধি যে উপনির্বাচনের হারের বড় কারণ, তা স্বীকার করে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুরও।
প্রশ্ন হল, যেখানে গুজরাতে উপনির্বাচন-পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেতা সত্ত্বেও বিজয় রূপানিকে সরিয়ে দিতে দ্বিধা করেননি মোদী-শাহেরা, সেখানে হারের পরে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে জয়রামের ভবিষ্যৎ কতটা নিরাপদ! জয়রামের জন্য ইতিবাচক দিক, হিমাচলে মুখ্যমন্ত্রী-বিরোধী শিবিরের সেই অর্থে অস্তিত্ব নেই। কিন্তু কংগ্রেসের কাছে চারটি কেন্দ্রে পরাজয়ের পরে দল বুঝতে পারছে, রাজ্যে জয়রামের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, তেমন প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়াও তীব্র। তাই গুজরাত-কর্নাটক-উত্তরাখণ্ড মডেলে জয়রামকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে দলের অভ্যন্তরে। বিকল্প হিসেবে নাম উঠে এসেছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রেম কুমার ধূমলের ছেলে অনুরাগ ঠাকুরের। তাঁকে সামনে রেখে ভোটে লড়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির অন্দরমহলে।
এ দিকে, মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে হার প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছিল কর্নাটকে সদ্য মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেওয়া বাসবরাজ বোম্মাইকে। বিশেষ করে নিজের ঘরের মাঠ, লিঙ্গায়েত-প্রধান হনগল আসনে বিজেপি প্রার্থীর পরাজয় বাসবরাজকে অস্বস্তির মুখে ঠেলে দেয়। প্রধানমন্ত্রীর ডাকে আজ দিল্লিতে এসেছিলেন বোম্মাই। বৈঠকের শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, রাজ্যে গত ১০০ দিনে কী ধরনের কাজ হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর হনগল আসনে পরাজয় প্রশ্নে বোম্মাইয়ের দাবি, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন জয়-পরাজয় রাজনীতির অংশ। পরাজয় ভুলে মানুষের হৃদয় জেতার উপরে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যাতে ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটে দলের জয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।