অযোধ্যার রামমন্দির। —ফাইল চিত্র।
জনতা আগে। তাই আপাতত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের রামলালা দর্শনে না-যাওয়ার পরামর্শ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সূত্রের মতে, মন্ত্রীরা গেলে প্রোটোকল ও নিরাপত্তার কড়াকড়ির জেরে সমস্যা হতে পারে ভক্তদের। তাই আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রীদের মার্চ মাসে রামলালা দর্শনের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
গত কাল রামমন্দির আমজমতার জন্য খুলে দেওয়া হলে প্রবল বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় মন্দির চত্বরে। ভিড় সামলাতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। ধাক্কাধাক্কিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের দাবি, গত কাল অযোধ্যায় প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের ভিড় হয়েছিল। আজ সংখ্যাটা তিন লক্ষ ছুঁয়েছে। তবে এ দিন পুণ্যার্থীরা মন্দিরে ঢোকার অনেক আগে থেকেই একাধিক লাইন করে দেওয়া হয়েছিল, যাতে ভিড়ের সম্পূর্ণ চাপ প্রবেশদ্বারের উপরে এসে না পড়ে। তাই ভিড় হলেও সেই অর্থে বিশৃঙ্খলা ছিল না আজ।
গত কালের অভিজ্ঞতার পরে আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের আপাতত অযোধ্যায় যেতে বারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সূত্রের বক্তব্য, মন্ত্রীদের নিরাপত্তা ও প্রোটোকলের জেরে আমজনতার উপরে কড়াকড়ির সম্ভাবনা তো রয়েইছে, উপরন্তু চলতি সপ্তাহ থেকে গেরুয়া শিবিরের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ মানুষ ও কর্মী-সমর্থকদের রামলালা দর্শনে নিয়ে আসার কথা রয়েছে। তাতেও বাড়তি ভিড়ের আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে ভিআইপি-রা এলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। তাই প্রাথমিক ভিড়ের ধাক্কা কমলে, মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের রামলালা দর্শনে যেতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তা ছাড়া, এপ্রিল থেকে লোকসভা নির্বাচন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মার্চ নাগাদ মন্ত্রীরা একে একে রামলালা দর্শনে গেলে দেশ জুড়ে হিন্দুত্বের হাওয়া তোলা যাবে বলে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মত। বস্তুত, সেই হাওয়া তুলতেই তড়িঘড়ি অসম্পূর্ণ মন্দির উদ্বোধন হয়েছে বলে বিরোধী শিবিরের অভিযোগ।
রামলালা দর্শনের দিনক্ষণ স্থির হয়ে রয়েছে বিজেপি-শাসিত বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অন্য মন্ত্রীদের। আগামী ৩১ জানুয়ারি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার যেমন অযোধ্যায় যাওয়ার কথা রয়েছে, তেমনই ১ ফেব্রুয়ারি অযোধ্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ২ ফেব্রুয়ারি উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী, ৫ ফেব্রুয়ারি মহারাষ্ট্রের একনাথ শিন্দে, তার পরের দিন অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু এবং ৯ ফেব্রুয়ারি হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর অযোধ্যায় যেতে পারেন। ১২ ফেব্রুয়ারি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা, ১৫ ফেব্রুয়ারি গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ন্ত, ২২ ফেব্রুয়ারি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, ২৪ ফেব্রুয়ারি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল ও ৪ মার্চ মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদবের রামলালা দর্শনের পরিকল্পনা রয়েছে। মন্ত্রিসভার সতীর্থেরাও যাবেন তাঁদের সঙ্গে। কিন্তু আজ মোদীর ওই পরামর্শের পরে তাঁদেরও রামলালা দর্শনের দিনক্ষণ পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
যোগীও ভিআইপি-দের উদ্দেশে অনুরোধ রেখেছেন, তাঁরা অযোধ্যায় এলে যেন নির্ধারিত সফরের অন্তত এক সপ্তাহ আগে স্থানীয় প্রশাসন বা শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টকে সে কথা জানান। গত কালের বিশৃঙ্খলার পরেই জরুরি প্রশাসনিক বৈঠকে বসেছিলেন যোগী। ভিড় কমাতে অযোধ্যাগামী বাস চলাচল আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে বেশ কিছু পদক্ষেপের নির্দেশও দিয়েছেন যোগী।
স্পষ্টতই, ভিড়ের চ্যালেঞ্জ নেওয়া ছাড়া গতি নেই অযোধ্যার। ভবিষ্যতে রামমন্দির ঘিরে আরও ১৩টি মন্দির মাথা তুলবে বলে ট্রাস্টের কোষাধ্যক্ষ স্বামী গুরুদেব গিরিজি জানান। অযোধ্যাকে বিশ্বের অন্যতম আধ্যাত্মিক গন্তব্য করে তোলাই লক্ষ্য তাঁদের।