বিহারে তিনটি পেট্রোলিয়াম প্রকল্পের সূচনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
ভোটের মুখে বিহারবাসীকে উপহার। তার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের প্রশংসা। এই দুই অস্ত্রে করোনা আবহের মধ্যেও কার্যত বিহার ভোটের প্রচার শুরু করে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। রবিবার তিনটি পেট্রোলিয়াম প্রকল্প বিহারবাসীকে উৎসর্গ করলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বললেন, ‘নব-ভারত’ ও ‘নব-বিহার’ গঠনে বিরাট ভূমিকা নিয়েছেন নীতীশ। বিহারে এনডিএ জোটের মুখ যে এ বারও জেডিইউ সুপ্রিমোই থাকছেন, সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মোদী।
রবিবার পারাদীপ-হলদিয়া-দুর্গাপুর পাইপলাইন প্রকল্পের দুর্গাপুর-বাঁকড়া শাখার সূচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি বাঁকড়া ও হর্ষিধিতে একটি করে লিকুইফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বটলিং প্ল্যান্টের যাত্রা শুরু হল প্রধানমন্ত্রী মোদীর হাতে। ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এই সূচনা প্রকল্পে নীতীশ কুমার, পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের মতো নেতা-মন্ত্রীরাও ছিলেন।
২০০৫ সালে নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসার আগে পর্যন্ত বিহারে দীর্ঘদিন ধরে শাসন করেছেন লালুপ্রসাদ যাদব ও তাঁর দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)। লালুপ্রসাদ বর্তমানে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির চারটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে রয়েছেন। সেই লালু তথা আরজেডি জমানার দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ দিন বলেন, ‘‘উন্নয়নের নিরিখে দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে পড়েছিল বিহার। রাজনীতি এবং আর্থিক সঙ্কট ছিল তার অন্যতম কারণ।’’ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘একটা সময় ছিল যখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ছিল না, ইন্টারনেট সংযোগের কথা কেউ ভাবতই না। আরও বহু সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে বিহারকে।’’ সেখান থেকেই নীতীশ উন্নয়নের হাল ধরেছেন বলে উল্লেখ করে মোদী বলেন, ‘‘আমাদের নব ভারত ও নব বিহার গঠনে বিরাট অবদান রয়েছে নীতীশের।’’
পেট্রোলিয়াম প্রকল্পের সূচনা অনুষ্ঠানে ভিডিয়ো কনফারেন্সে নীতীশ কুমার, ধর্মেন্দ্র প্রধান-সহ অন্যরা। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
আরও পড়ুন: প্রথায় ব্যাতিক্রম, হচ্ছে না সর্বদল বৈঠক, সোমবার শুরু বাদল অধিবেশন
বিহারের রাজনৈতিক সমীকরণ মূলত দু’টি ধারায় প্রবাহিত। ইউপিএ জোটের মুখ লালুপ্রসাদ বনাম এনডিএর নীতীশ কুমার। কিন্তু ২০১৩ সালে গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণার পর এনডিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসে জেডিইউ। ফলে ২০১৪ সালের লেকসভা ভোটে লড়াই হয়ে দাঁড়ায় ত্রিমুখী। নীতীশ একা লড়ে মাত্র দু’টি আসন পান। তার পর ২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ইউপিএ জোটে শামিল হন নীতীশ। ফের মুখ্যমন্ত্রী হন। কিন্তু ২০১৭ সালে আরজেডির সঙ্গে মতবিরোধের জেরে ফের ইউপিএ ছাড়েন এবং এনডিএ-তে যোগ দেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও দুই শরিকের জোট ছিল বিহারে। এ বছরের নভেম্বরের মধ্যেই বিহারে ভোটপর্ব শেষ করতে হবে এবং করোনা আবহেও নির্দিষ্ট সময়েই ভোট হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই পরিস্থিতিতে মোদীর নীতীশ-প্রশস্তির মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। অন্য দিকে তিনটি পেট্রোলিয়াম প্রকল্পও এই সময় সূচনা ভোটমুখী বিহারবাসীর মন জয়ের চেষ্টা হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
আরও পড়ুন: আরজেডি ছেড়ে উস্কে দিয়েছিলেন জল্পনা, আচমকা এমসে মৃত্যু রঘুবংশের
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক সূত্রে খবর, বাঁকড়ার এলপিজি বটলিং প্ল্যান্টটি ১৩১.৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করেছে ইন্ডিয়ান অয়েল। ভাগলপুর, বাঁকড়া, জামুই, আরারিয়া, কিষাণগঞ্জ, কাটিহারের মতো জেলায় রান্নার গ্যাসের চাহিদা মেটাবে এই প্রকল্প। লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা, দেওঘর, দুমকা, সাহেবগঞ্জ ও পাকুড় জেলার বাসিন্দারাও উপকৃত হবেন। ১৮০০ টন স্টোরেজ ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্ল্যান্ট থেকে প্রতিদিন ৪০ হাজার সিলিন্ডার ভর্তি করা সম্ভব হবে। অন্য বটলিং প্ল্যান্টটি তৈরি হয়েছে হর্ষিধিতে। হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম এটি তৈরি করেছে ১৩৬.৪ কোটি টাকা খরচ করে। এই প্ল্যান্ট থেকে পূর্ব চম্পারণ, মুজাফ্ফরপুর, সিওয়ান, গোপালগঞ্জ ও সীতামঢ়ী জেলায় গ্যাস সরবরাহ করা হবে। দুই প্রকল্পেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।