ফাইল চিত্র।
পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্ভাব্য সাক্ষাৎ নিয়ে দু’দেশের শীর্ষ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। আগামী জুলাইয়ে তাসখন্দে শাংহাই কোঅপারেশন অর্গ্যানাইজ়েশনের শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা দুই রাষ্ট্রনেতার। সেই শীর্ষ বৈঠকের ফাঁকেই দুই নেতার একান্ত বৈঠকের আয়োজন করা যায় কি না, দেখছেন দু’দেশের কূটনীতিকেরা।
ইমরান খান গদিচ্যুত হওয়ার পরে ঠিক এক সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন পিমিএল(এন) প্রধান শাহবাজ় শরিফ। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সামাজিক মাধ্যমে কথাবার্তা হয়। মোদী শাহবাজ়কে তাঁর অভিনন্দন বার্তায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার কথা বলেন। মোদীর শুভেচ্ছার জবাবে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রী পাল্টা জানান, জম্মু ও কাশ্মীর-সহ অমীমাংসিত বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রয়োজন।
সূত্রের খবর, দুই নেতার সেই শুরু করা ‘সংলাপ’ এগিয়ে নিয়ে যেতেই তড়িঘড়ি দু’জনের একান্ত বৈঠকের কথা ভাবা হচ্ছে। কূটনৈতিক সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, দুই নেতার কথাবার্তা ফলপ্রসূ হলে তাসখন্দ বৈঠকের পরেই পাকিস্তানে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। পাক পঞ্জাবের কটাসরাজ মন্দির দর্শন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি মোদী পাকিস্তানে গেলে তাঁকে ইসলামাবাদ আসতে আমন্ত্রণ জানাবেন শাহবাজ়। তবে তাসখন্দে দু’জনের কথা বা মোদীর পাকিস্তান সফর তখনই সম্ভবপর হবে, যদি পাক সেনায় স্থিতাবস্থা বজায় থাকে। আগামী নভেম্বরে অবসর নেওয়ার কথা বর্তমান সেনাপ্রধান কমর জাভেদ বাজওয়ার। সূত্রের খবর, নিজে গদি ছাড়ার আগে বাজওয়াকে সরাতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সেনার অন্দরেও বাজওয়াকে নিয়ে নানা অসন্তোষ রয়েছে। ফলে পাক সেনাবাহিনীর সে রকম টালমাটাল অবস্থা হলে মোদীর পাকিস্তান সফর স্থগিত হয়ে যেতে পারে।
বৈশাখী উৎসব উপলক্ষে গত কয়েক দিনে প্রায় দু’হাজার শিখ পুণ্যার্থীকে সে দেশে যাওয়ার বিশেষ ভিসা দিয়েছে ইসলামাবাদ। হাসানআব্দালে পাঞ্জা সাহিব গুরুদ্বার এবং নানকানা সাহিবে যাচ্ছেন এই সব পুণ্যার্থী। তাঁদের পাকিস্তানে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ আজ টুইট করেন, ‘‘বৈশাখী উপলক্ষে যে সব শিখ পাকিস্তানে এসেছেন, তাঁদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। এই উৎসব আশা, বিকাশ ও পুনরুজ্জীবনের।’’ পাক হাই কমিশনার সূত্রের খবর, এ বছর ১২ থেকে ২১ এপ্রিল পাকিস্তানের যাওয়ার জন্য ২০২২ জনকে ভিসা দিয়েছে ইসলামাবাদ। গত বছর কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপে এত পুণ্যার্থী পাকিস্তানে যাওয়ার সুযোগ পাননি।
২০১৪ সালে প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময়ে তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে শাহবাজ়ের দাদা, পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ় শরিফকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তার পরে ২০১৫ সালে একটি অঘোষিত সফরে লাহোরে গিয়ে শরিফদের একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন মোদী। তবে ২০১৬-এ পঠানকোটে এবং ২০১৯-এ পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পরে দু’দেশের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। দু’দেশই তাদের বেশির ভাগ কূটনীতিককে সরিয়ে নিয়েছে। মোদী-শরিফ সংলাপ এত সহজে সেই বরফ গলাতে পারবে না বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন দু’দেশের কূটনীতিকেরা।