প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’য় যে কোনও উপায়ে ফাটল ধরানো এবং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগকে আরও ধারালো করা— নির্বাচনী মরসুমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই জোড়া কৌশল অব্যাহত। পাল্টা জবাব দিয়েছে কংগ্রেসও।
মহারাষ্ট্রের এনডিএ-র সাংসদদের সঙ্গে আজ বৈঠক করেন মোদী। সেখানে কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রকে বিঁধতে গিয়ে এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারকে কেন প্রধানমন্ত্রী করা হয়নি সে প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি, কংগ্রেসের ‘রাজবংশের রাজনীতি’ অর্থাৎ পরিবারবাদের কারণেই পওয়ারের মতো যোগ্য ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে পারেননি। সূত্রের বক্তব্য, বৈঠকে মোদী বলেছেন, কংগ্রেসের মতো অহংকারী ও উদ্ধত নয় বিজেপি। তাই তারা ক্ষমতায় থাকবে। এর পর পওয়ার প্রসঙ্গে মোদী বলেন, ১৯৯৯ সালে সনিয়া গান্ধীকে বিদেশি বংশোদ্ভূত বলে তোপ দেগে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন ‘মরাঠা স্ট্রংম্যান’। তার পর তিনি জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি(এনসিপি) গঠন করেন। সেই দলেরই অন্যতম নেতা তথা শরদের ভাইপো অজিত পাওয়ার আজ বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন।
শুধু পওয়ারই নন, কংগ্রেসকে খোঁচা দিতে প্রণব মুখোপাধ্যায়কেও টেনে আনেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর সঙ্গে প্রণবের প্রথম সাক্ষাৎটি তুলে ধরে মোদী বলেছেন, ‘উনি আমাকে বলেছিলেন বিজেপি আপনাকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। এমন ঘটনা প্রথম বার ঘটল। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর নির্বাচনে সম্পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার মতো ঘটনা আগে ঘটেনি।’
মোদীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কংগ্রেস সূত্রের যুক্তি, প্রণবকে কংগ্রেসই রাষ্ট্রপতি করেছে। পওয়ার কংগ্রেস ছেড়ে অন্য দল গড়েছেন। ফলে জ্যোতি বসু বা পওয়ারকে কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী করেনি, এ কথা বলার যা অর্থ, নবীন পট্টনায়েক বা জয়ললিতাকে বিজেপি প্রধানমন্ত্রী করেনি বলার অর্থও একই। তাঁরা অন্য দলের নেতা ছিলেন। সে রকম কোনও রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনও আসেনি যে কংগ্রেসকে জোটের স্বার্থে পওয়ারকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে।
পরিবারতন্ত্রে নিয়ে মোদীর আক্রমণের পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেননি কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁদের যুক্তি, মনমোহন সিংহ নেহরু-গান্ধী পরিবারের কেউ নন। কিন্তু তিনি ১০ বছর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গান্ধী পরিবারের শেষ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ১৯৮৯ সালে। তার পর প্রায় সাড়ে তিন দশক কেটে গিয়েছে। তার মধ্যে গান্ধী পরিবারের বাইরের নেতা কংগ্রেসের নরসিংহ রাও পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। অতীতে আঞ্চলিক দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমর্থন করেছে কংগ্রেস। এইচ ডি দেবগৌড়া এবং আই কে গুজরাল প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন কংগ্রেসের সমর্থনেই। কংগ্রেসের বক্তব্য, বর্তমানে ভারতবাসীর একটি বড় অংশ (যুব সম্প্রদায়) গান্ধী পরিবারের কাউকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখেইনি।