Bharat Ratna

এ বার দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার ঘোষণা মোদীর, নেপথ্যে কোন ‘সবুজ’ সঙ্কেত?

এ বছর এই নিয়ে পঞ্চম ‘ভারতরত্ন’ প্রাপকের নাম ঘোষণা করল কেন্দ্র। যার মধ্যে বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তথা দেশের প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী ছাড়া বাকি চারটিই মরণোত্তর সম্মান।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:০৫
Share:

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

আরও তিন ভারতীয়কে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সম্প্রতিই দেশের প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। এ বার দেশের দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে এই সম্মান দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মোদী। এই দু’জনের কেউই বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নন। তবে একই সঙ্গে দু’জনের কেউই গান্ধী পরিবারের পছন্দের তালিকার শীর্ষে ছিলেন না। মোদীর ‘ভারতরত্ন’-এর তালিকায় এক বিজ্ঞানীও রয়েছেন। শুক্রবার সেই তালিকা প্রকাশ্যে আসার পর প্রশ্ন উঠেছে, নেপথ্যে কোনও সবুজ সঙ্কেত কাজ করছে কি?

Advertisement

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছেন, কংগ্রেস সরকারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাওকে ‘ভারতরত্ন’ দিচ্ছে তাঁর সরকার। এর পাশাপাশি ভারতের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী তথা ভারতীয় লোক দলের প্রতিষ্ঠাতা চৌধরি চরণ সিংহকেও ভারতরত্ন সম্মান দেওয়া হবে। এ ছাড়া এই দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি এক বিজ্ঞানীকেও দেশের সর্বোচ্চ সম্মান প্রাপক হিসাবে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর নাম এমএস স্বামীনাথন। দক্ষিণভারতীয় এই কৃষি বিজ্ঞানীকে ভারতের সবুজ বিপ্লবের অন্যতম রূপকার বলা হয়। তাঁকে এবং একই সঙ্গে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ‘কৃষকপুত্র’ চৌধরি চরণকে (যাঁর জন্মদিনে কৃষক দিবস পালন করা হয় ভারতে, যিনি কৃষকদের স্বার্থে নিজের রাজ্যে আইনও এনেছিলেন) মোদী সরকার ‘ভারতরত্ন’ সম্মানের জন্য মনোনীত করায় প্রশ্ন উঠেছে, মোদী কি লোকসভা ভোটের আগে কোনও সবুজ সঙ্কেত দিচ্ছেন? যদিও এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের বক্তব্য, যদি চৌধরি চরণ এবং স্বামীনাথনকে সত্যিই সম্মান জানাতে চায় কেন্দ্র, তবে তাদের আগে কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষিত করা উচিত। যে কৃষকদের জন্য এমএসপি (ন্যূনতম মূল্য নিশ্চিত করা ) নীতি নেওয়ার পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছিলেন কৃষি বিজ্ঞানী, তাকে কার্যকর করুক। কিন্তু তার বেলায় কেন্দ্র চুপ।

তবে কংগ্রেস যা-ই বলুক, রাজনীতিকেরা বলছেন, মোদীর ঘোষিত ‘ভারতরত্ন’ তালিকায় বিশেষ করে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে গান্ধী পরিবারের অপছন্দের তালিকায় থাকা মানুষজনকেই। রাজনৈতিক যে দুই ব্যক্তিত্ব ওই তালিকায় রয়েছেন, তাঁরা দু’জনেই গান্ধী পরিবারের পছন্দের মানুষ নন। কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী হলেও নেহরুর সময়কার অর্থনীতি থেকে সরে এসেছিলেন নরসিংহ। তাঁর আমলেই দেশে প্রথম উদারীকরণ হয়েছিল। তাঁর মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী ছিলেন দেশের মনমোহন সিংহ। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই সেই সময় বলেছিলেন, ওই উদারীকরণের নীতি গান্ধী পরিবার ভাল চোখে দেখেনি। পরে মৃত্যুর পরও গান্ধী পরিবারের থেকে অবজ্ঞা এবং উপেক্ষাই জুটেছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর। ২০০৪ সালে সেই সময় কংগ্রেস সরকার ছিল কেন্দ্রে। কথিত আছে নরসিংহের শেষকৃত্য শেষ হওয়ার আগেই শ্মশান ছেড়েছিলেন শ্মশানযাত্রীরা। রাজনীতি বিষয়ক লেখক সঞ্জয় বারু তাঁর বই ‘দ্য অ্যাকসিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’-এ লিখেছিলেন সে কথা।

Advertisement

অন্য দিকে, চৌধরি চরণ ছিলেন মহাত্মা গান্ধীর একাগ্র অনুগামী। দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম। উত্তরপ্রদেশের এই নেতা ছিলেন কংগ্রেসের একনিষ্ঠ। কিন্তু পরে তিনিও কংগ্রেস ছেড়ে নিজস্ব দল গঠন করেন। জনতা পার্টির সঙ্গেও ছিলেন প্রাক্তন উত্তরপ্রদেশের এই মুখ্যমন্ত্রী চৌধরি চরণ। জনতাপার্টি সেকুলার দলে থাকাকালীনই তিনি দেশের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হন। কংগ্রেসের পর তিনি ছিলেন দেশের দ্বিতীয় অ-কংগ্রেসী প্রধানমন্ত্রী।

ফলে তাঁকে এবং নরসিংহকে কেন্দ্র ‘ভারতরত্ন’ সম্মান দেওয়ায় অনেকেই বলছেন, গান্ধী পরিবারের অপছন্দের নেতাদের জেনে বুঝেই বেছে নিয়েছেন মোদী।

তবে এই বাছাই পর্বের নেপথ্যে দক্ষিণভারতীয় প্রাধান্যও নজর টেনেছে কারও কারও। দেশের নবম প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ ছিলেন দেশের প্রথম দক্ষিণ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদে জন্ম তাঁর। মৃত্যু হয় ২০০৪ সালে। কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকারের বিদেশ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। সামলেছেন প্রতিরক্ষা এবং স্বরাষ্ট্র দফতরের মন্ত্রিত্বও। তবে তারও আগে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরসিংহ। লোকসভা ভোটে যেখানে কেন্দ্রের শাসক দল দক্ষিণ ভারতে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে বলে বিভিন্ন মহলের মত, সেখানে একই সঙ্গে নরসিংহ এবং স্বামীনাথনের মনোনয়নকে এই সমীকরণের সঙ্গেও মেলাচ্ছেন কেউ কেউ।

তবে সমীকরণ যা-ই হোক, এ বছরের ‘ভারতরত্ন’ তালিকায় আরও একটি বিষয় লক্ষনীয়। শুক্রবারের ঘোষণার পর এ বছর দেশের পাঁচ জন ‘ভারতরত্ন’ প্রাপকের নাম ঘোষণা করল কেন্দ্র। কিন্তু এই পাঁচ জনের মধ্যে বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তথা দেশের প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী আডবাণী ছাড়া বাকি চারটিই মরণোত্তর সম্মান। গত বছর সেপ্টেম্বরে মৃত্যু হয়েছে বিজ্ঞানী স্বামীনাথনের। নরসিংহ এবং চৌধরি চরণের মৃত্যু হয়েছে যথাক্রমে ২০০৪ এবং ১৯৮৭ সালে। এর আগে আডবাণীর সঙ্গে বিহারের ১১তম মুখ্যমন্ত্রী কর্পূরি ঠাকুরের নাম ‘ভারতরত্ন’ প্রাপক হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যু হয় ১৯৮৮ সালে।


আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement