ছবি: পিটিআই।
নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণার পর থেকেই তা দ্রুত কার্যকর করার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে, সময় বেঁধে, ২০২২ সাল থেকেই ওই নীতির ভিত্তিতে তৈরি পাঠ্যক্রম স্কুল-কলেজে চালুর আহ্বান জানালেন তিনি। বিরোধীদের যদিও কটাক্ষ, দেশে ‘অচ্ছে দিন’ নিয়ে আসা থেকে শুরু করে ভারতকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি করে তোলা— এমন অজস্র বিষয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়েও, পরে অবলীলায় তা পিছিয়ে দিয়েছেন মোদী। তখন প্রচার-যন্ত্রও এমন ভাবে বেজেছে যে, অনেক ক্ষেত্রে পুরনো সময়সীমা আর খেয়ালই থাকেনি অনেকের। শিক্ষা নীতির ক্ষেত্রেও তা হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
শুক্রবার শিক্ষা মন্ত্রক আয়োজিত ‘একবিংশ শতাব্দীতে স্কুল শিক্ষা’ শীর্ষক ভিডিয়ো-আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঠিক করা হয়েছে, ২০২২ সালে, যখন দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন করবে, তখন পড়ুয়ারা এই (জাতীয় শিক্ষানীতির ভিত্তিতে তৈরি) নতুন পাঠ্যক্রমের সঙ্গেই নতুন ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াবে।” প্রকল্প বাস্তবায়নের এমন ‘কড়া’ সময়সীমা বেঁধে দিলেও, সেই পথে যে চ্যালেঞ্জ যথেষ্ট, তা বিলক্ষণ জানেন মোদী। যেমন, পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কয়েকটি বিরোধী-শাসিত রাজ্যের আপত্তি, শিক্ষা কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ দায়িত্ব। অথচ যথেষ্ট আলোচনা না-করে এবং রাজ্যের মতামতকে গুরুত্ব না-দিয়ে কার্যত একতরফা ভাবে এই নতুন নীতি চাপিয়ে দিতে চাইছে মোদী সরকার। সম্ভবত সে কথা মাথায় রেখেই এ দিন ২০২২ সালের লক্ষ্য বাঁধার পরেই মোদী বলেছেন, “এর জন্য সবার পরামর্শ নেওয়া হবে।” তাঁর দাবি, নীতি কার্যকর করতে শিক্ষা মন্ত্রক পরামর্শ চাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৫ লক্ষ পরামর্শ এসেছে। যা গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্কের কথায়, কেন্দ্র ও সমস্ত রাজ্য মিলে এই নীতি কার্যকর করবে। তার জন্য যত আলোচনা প্রয়োজন, তাঁরা তা করতে তৈরি।
তামিলনাড়ু-সহ বিভিন্ন দক্ষিণী রাজ্যের আশঙ্কা, এই নীতির মাধ্যমে সর্বত্র হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে কেন্দ্র। সেই আশঙ্কা যে নীতি বাস্তবায়নের পথে উঁচু দেওয়াল হতে পারে, তা কেন্দ্রের অজানা নয়। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী ফের বলেছেন, ভাষার বিষয়ে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। পাঠ্যবস্তু সহজে বোঝার বন্দোবস্ত করতেই নতুন শিক্ষানীতি অন্তত পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষার পক্ষপাতী। আর নিশঙ্কের আশ্বাস, “কোনও ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রশ্ন নেই।” ২০২২ সালের মধ্যে এই শিক্ষানীতি পুরোদস্তুর চালু করতে শিক্ষক, অভিভাবক এবং পড়ুয়াদের উদ্যোগী হওয়ার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষত শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেছেন, “বিমান যত উন্নত হোক, তা চালাবেন তো পাইলটই।” কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, নীতি মেনে দু’বছরে শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির ৬% নিয়ে যাওয়া যাবে তো? নইলে এই বিপুল কর্মযজ্ঞের টাকা আসবে কোথা থেকে? কী ভাবে মিলবে নতুন ক্লাসরুম তৈরি কিংবা শিক্ষক নিয়োগের টাকা?
একই সঙ্গে বিরোধী শিবির মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারে ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন ফেরি করেছিলেন মোদী। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকেই ২০২২-কে নিশানা করা শুরু হয়। সকলের বাড়িতে পানীয় জল, মাথার উপরে ছাদ, ঘরে-ঘরে বিদ্যুৎ, প্রতি গ্রামে ইন্টারনেট— এমন অজস্র প্রতিশ্রুতি তখন থেকেই ঠাঁই পেয়েছে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির বছরে। কিন্তু এ সবের মধ্যেও বহু লক্ষ্যকে ঠেলা হচ্ছে সরকারের মেয়াদ পূর্তির বছর ২০২৪ সালের দিকে। শিক্ষানীতির ভবিতব্যও তা-ই কিনা, তার উত্তর দেবে সময়ই।