প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
মাস পাঁচেক পরে কর্নাটকে বিধানসভা ভোট। তার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বার্তা, বাকি রাজ্যগুলি তো বটেই, অন্য দেশের সামনেও চ্যালেঞ্জ সেখানকার ‘ডাবল ইঞ্জিন সরকার’। বুধবার ভিডিয়ো কনফারেন্সে ‘ইনভেস্ট কর্নাটক ২০২২’ শীর্ষক তিন দিনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই এ কথা বলেছেন। তবে বিরোধীরা এই নিয়ে বিঁধতে ছাড়ছেন না। তাঁদের কটাক্ষ, ‘ডাবল ইঞ্জিন’ আদপে দুর্নীতির জোর বাড়িয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে রাজ্য ও কেন্দ্রে একই দলের সরকার গড়ার কথা বলেই থাকেন নরেন্দ্র মোদী অমিত শাহ-সহ বিজেপির তাবড় নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, এতে কেন্দ্র ও রাজ্যের সমন্ব সংক্রান্ত সুবিধায় উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। ভোটমুখী কর্নাটকে মোদীর মুখে আবার এই কথা শুনে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, গুজরাতে সেতু ভেঙে প্রচুর মানুষের মৃত্যুতে বেকায়দায় সেখানকার তথাকথিত ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার। এ হেন সরকার রয়েছে উত্তরপ্রদেশেও, কিন্তু সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বার বার প্রশ্নের মুখে পড়ছে। সব মিলিয়ে ‘ডাবল ইঞ্জিন’-এর পুরনো ধুয়ো তুলে হালের বিড়ম্বনা আড়াল করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী, কটাক্ষ আসছে বিরোধী শিবির থেকে।
কর্নাটকের বোম্মাই সরকারও দুর্নীতির নানা অভিযোগ ঘিরে বিপাকে। সরকারি কাজের বরাত পাওয়ার জন্য বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের অন্তত ৪০ শতাংশ টাকা ঘুষ হিসাবে দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। তারা বোম্মাইয়ের ছবি দিয়ে ‘পিসিএম’ লেখা পোস্টার সেঁটে প্রচার চালাচ্ছে। রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রায় সে রাজ্যে ‘পেসিএম’ লেখা টিশার্ট পরা এক যুবককে গ্রেফতার করা নিয়ে বিতর্কও হয়েছে বিস্তর। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের দাবি, এই যাত্রায় বিজেপি ও আরএসএস রীতিমতো চিন্তিত।
এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য ঘিরে নতুন ইন্ধন মিলেছে তরজায়। মোদী এ দিন বলেন, ‘‘কর্নাটকের ডাবল ইঞ্জিনের ক্ষমতা রয়েছে, একই দল (বিজেপি) রাজ্য এবং কেন্দ্র উভয়েই সরকারে রয়েছে৷ রাজ্য যে দ্রুত উন্নতি করছে এবং ব্যবসা ও বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্র সহজ সরল করার ক্ষেত্রে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে, তার একটা কারণ এটাই।’’ দাবি করা হয়েছে, কোভিডের পরে এতটা বড় মাপে বিনিয়োগকারী সম্মেলন দেশে প্রথম। এটি প্রতিযোগিতামূলক এবং সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর চূড়ান্ত নজির বলে উল্লেখ করেছেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রীর দাবি, কর্নাটক বিশ্বের বৃহত্তম প্রযুক্তি ক্লাস্টারগুলির অন্যতম। শিল্প থেকে তথ্যপ্রযুক্তি, ফিন-টেক থেকে বায়োটেক—অগ্রগতির নতুন রেকর্ড লেখা হচ্ছে এখানে। তাঁর বক্তব্য, শুধু দেশের অন্য রাজ্যগুলি নয়, কর্নাটক অন্য অনেক দেশকেও চ্যালেঞ্জের মুখে রেখেছে। তিনি বলেন, ‘‘যখনই প্রতিভা আর প্রযুক্তি নিয়ে কথা হয়, প্রথমেই যে নামটা মনে আসে সেটা হল: ‘ব্র্যান্ড বেঙ্গালুরু’। এটা প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বজুড়ে।’’
জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে যখন দক্ষিণের রাজ্যগুলি প্রতিবাদের প্রথম সারিতে রয়েছে, কর্নাটক থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোনা গিয়েছে সেখানকার ভাষা ও সংস্কৃতির নানা প্রশংসা। কন্নড় ভাষার কোমলতা, সমৃদ্ধ সংস্কৃতির তারিফ করেন তিনি। রাজ্যে বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘কর্নাটক এমন একটা জায়গা যেখানে ঐতিহ্য এবং প্রযুক্তি, দুটোই রয়েছে। পরিবেশ আর সংস্কৃতির দুর্দান্ত মিশেল আছে।’’