দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী।
কৃষি বিল পাশ করিয়ে নিলেও, তা নিয়ে লাগাতার বিরোধিতার মুখে পড়তে হচ্ছে সরকারকে। তা নিয়ে কৃষকদের বার্তা দিতে সঙ্ঘ পরিবারের অগ্রপথিক দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ১০৪ তম জন্মবার্ষিকীকেই বেছে নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর দাবি, ব্যক্তিগত স্বার্থে কিছু মানুষ কৃষকদের ভুল বোঝাচ্ছেন এবং বিপথে চালিত করছেন।
দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ১০৪ তম জন্মবার্ষিকীতে এ দিন বিজেপির কার্যকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহও তাতে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘মিথ্যে বলে এত দিন কৃষকদের পাওনা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিলেন যাঁরা, তাঁরাই এখন কৃষকদের কাঁধে বন্দুক রেখে চালাচ্ছেন। সরকারি নীতি নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন।’’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘করের বোঝা বাড়লেও, এত দিন কৃষকদের আয় বাড়েনি। বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ সরকারই তাঁদের কথা ভেবেছে। আগের চেয়ে দেড়গুণ বেশি সহায়ক মূল্য তুলে দিয়েছেন তাঁদের হাতে। ব্যাঙ্কের সঙ্গে কৃষকদের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করায় সচেষ্ট হয়েছে সরকার।’’
আরও পড়ুন: ২৮ অক্টোবর থেকে তিন দফায় ভোট বিহারে, ফলাফল ১০ নভেম্বর
বাদল অধিবেশন চলাকালীন সম্প্রতি বিরোধী শূন্য সংসদে শ্রম বিলও পাশ করিয়ে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার, যার আওতায় বড় বড় সংস্থাগুলিকে অবাধ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। কিন্তু এ দিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘কৃষকদের মতোই বহু বছর ধরে শ্রমিকদের আইনের জাঁতাকলে আটকে রাখা হয়েছিল। ক্ষেত, নির্মাণ, সংবাদমাধ্যম, চিত্রনির্মাণ শিল্পে যুক্ত শ্রমিকদের জন্য আলাদা আলাদা আইন ছিল। তাই বিচারের জন্য বছরের পর বছর ধরে আদালতের দরজায় ঘুরতে হত তাঁদের। চার লেবার কোডের মাধ্যমে তাঁদের সেই গোলকধাঁধা থেকে বার করে আনতে সচেষ্ট হয়েছি আমরা।’’
নরেন্দ্র মোদীর কথায়, ‘‘শ্রমিক আইনকে আগের চেয়ে সরল ও সোজা করা হয়েছে। এতে দেশের ৫০ কোটি শ্রমিক যাতে সময়ে বেতন পান, আইনি ভাবে তা সুনিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছি আমরা। এত দিন দেশের ৩০ শতাংশ শ্রমিক ন্যূনতম বেতন পেতেন। আগামী দিনে অসংগঠিত ক্ষেত্রে নিযুক্ত সমস্ত শ্রমিকও সঠিক বেতন পাবেন। এ বার থেকে ঠিকা শ্রমিকরাও নিয়মিত বেতন পাবেন। আগের মতো যত ক্ষণ ইচ্ছা তাঁদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া যাবে না। বরং তাঁদের জন্যও বাঁধাধরা কাজের সময় থাকবে।’’
এ দিন প্রধানমন্ত্রী বলেন—
• ২১ শতকের ভারত ও প্রবীণ ও নবীনের মেলমন্ধনে তৈরি। তাই নতুন প্রজন্মের কাছেও আমাদের আদর্শ, ঐতিহ্য, অনুপ্রেরণা পৌঁছে দিতে হবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রাজনীতিক দল হলেও, দেশের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশে আমাদের সাহায্য পৌঁছে দিতে হবে। নিজেদের সামাজিক দায়িত্বও সতর্কতার সঙ্গে পালন করতে হবে। করোনা কালে ২ গজ দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা এবং নিয়মিত হাত ধোওয়া, এ সব নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
আরও পড়ুন: দীপিকাদের চ্যাট ফাঁস কী ভাবে? বিপাকে পড়ে সুরক্ষার আশ্বাস হোয়াটসঅ্যাপের
• করোনা কালেও আমরা মানুষের পাশে থেকেছি। দেশের প্রতিটি কোণে সাহায্য পৌঁছে দিয়েছেন বিজেপির কার্যকর্তারা। তার জন্য দলের কার্যকর্তা এবং সর্বভারতীয় সভাপতি নড্ডাজিকে অভিনন্দন জানাই।
• ঘরে ঘরে জল ও গ্রামে গ্রামে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দিচ্ছি আমরা। অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছি আমরা।
• কেন্দ্র হোক রাজ্য, বিজেপি সরকার সমাজের সকলকে সমান সুবিধা দেওয়ার পক্ষপাতী। আমাদের কাছে দেশের চেয়ে বড় কিছু নেই। এক বছর আগে দেশবাসী বিজেপিকে ফের ক্ষমতায় এনেছে। তাঁদের জন্য অনেক পরিবর্তন এনেছি আমরা।
• আগে যে শ্রমিক আইন ছিল, তাতে দেশের মহিলা শ্রমিকদের জন্য নিরাপত্তা ছিল না। নয়া আইনে তাঁরাও পুরুষদের সমান সুযোগ সুবিধা পাবেন।
• এত দিন দেশের ৩০ শতাংশ শ্রমিকরাই ন্যূনতম বেতন পেতেন। আগামী দিনে অসংগঠিত ক্ষেত্রে নিযুক্ত সমস্ত শ্রমিকও তা পাবেন। এ বার থেকে ঠিকা শ্রমিকরাও নিয়মিত বেতন পাবেন।
• শ্রমিক আইনকে আগের চেয়ে সরল ও সোজা করা হয়েছে। এতে দেশের ৫০ কোটি শ্রমিকরা যাতে সময়ে বেতন পান, আইনি ভাবে তা সুনিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছি আমরা।
• কৃষকদের মতোই বহু বছর ধরে শ্রমিকদের আইনের জাঁতাকলে আটকে রাখা হয়েছিল। ক্ষেত, নির্মাণ, সংবাদমাধ্যম, চিত্রনির্মাণ শিল্পে যুক্ত শ্রমিকদের জন্য আলাদা আলাদা আইন ছিল। তাই বিচারের জন্য বছরের পর বছর ধরে আদালতের চক্কর কাটতে হতো তাঁদের। চার লেবার কোডের মাধ্যমে তাঁদের সেই গোলোকধাঁধা থেকে বার করে আনায় সচেষ্ট হয়েছি আমরা।
• যাঁরা মিথ্যে বলে এত দিন কৃষকদের পাওনা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিলেন, এখন কৃষকদের কাঁধে বন্দুক রেখে চালাচ্ছেন তাঁরা। সরকারি নীতি নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন।
• বেশি সংখ্যক কৃষিকদের হাতে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। আগে যাঁদের ২ হেক্টর পর্যন্ত জমি ছিল, তাঁরাই কিসান ক্রেডিট কার্ড পেতেন। আজ সকলেই এই সুবিধা পান। বর্তমানে পশুপালন এবং মাছ চাষে যাঁরা নিষুক্ত রয়েছেন, তাঁরাও এই সুবিধা পাচ্ছেন।
• করের বোঝা বাড়লেও, এত দিন কৃষকদের আয় বাড়েনি। বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ সরকারই তাঁদের কথা ভেবেছে। আগের চেয়ে দেড়গুণ বেশি সহায়ক মূল্য তুলে দিয়েছেন তাঁদের হাতে। ব্যাঙ্কের সঙ্গে কৃষকদের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করায় সচেষ্ট হয়েছে সরকার।
• রাষ্ট্রের কল্যাণ ছেড়ে কিছু মানুষ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাই বহু বছর ধরেও সাধারণ মানুষের কাছে সরকারি সাহায্য পৌঁছয়নি। তাদের নীতি সাধারণ মানুষের বোধগম্য হত না।
• স্বাধীনতার পরে বহু দশক ধরে কৃষক ও শ্রমিকদের নামে অনেক স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। অনেক বড় বড় ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সে সব যে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তা বুঝতে পেরেছিলেন মানুষ।
• যুবসমাজ, শ্রমিকশ্রেণী এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে বর্তমানে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলির তরফে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। করদাতা মানুষ যাতে সমস্যার মুখোমুখি না হন তার জন্য ‘ফেসলেস ট্যাক্স সিস্টেম’ কর ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
• দীনদয়ালজি অত্যন্ত দূরদর্শী ছিলেন। ২১ শতকের ভারতকে বিশ্বের সামনে প্রতিষ্ঠিত করায় ওঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
• স্বাধীন ভারতের রূপরেখা তৈরিতে যখন বিদেশি নীতি অনুসরণ করা হচ্ছিল, সেইসময় দেশীয় সংস্কৃতির উপর জোর দিয়েছিলেন দীনদয়ালজি।
• দীনদয়ালজি ভারতের রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি এবং রাজনীতি, সব কিছু নিয়ে লিখেছিলেন।
• রাষ্ট্র এবং সমাজ হিসেবে ভারতকে উন্নততর করে তোলায় দীনদয়ালজির ভূমিকা আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।
• পণ্ডিত দীনদয়ালজির সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়নি আমার। কিন্তু ওঁর আদর্শ ও চিন্তাভাবনা, প্রতি মুহূর্তে অনুপ্রেরণা জোগায়।
• আপনাদের পরিশ্রমের কথা সংবাদমাধ্যমে ছাপুক বা না ছাপুক, দরিদ্র মানুষের মন জয় করেছেন আপনারা।
• এর মধ্যে অনেক জন প্রাণও হারিয়েছেন। অন্যকে সাহায্য করতে গিয়ে বিজেপি কার্যকর্তারা সংক্রমিত হয়ে পড়েছেন। আপনাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
• পণ্ডিতজির আদর্শ অনুসরণ করে সকলে এগিয়ে চলুন। দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের সেবায় নিরন্তর কাজ করে চলেছেন আপনারা। করোনা সঙ্কটের মধ্যেও বিজেপির কর্মীরা সাধারণ মানুষের সেবায় নিযুক্ত রয়েছেন।
•দেশ জুড়ে বিজেপির কর্মঠ কার্যকর্তাদের দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানাই।