প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই ।
সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৮ জুন উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে একটি কৃষক সম্মেলনে যোগ দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে-র প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে তেমনটাই। যদি মোদী বারাণসী যান, তা হলে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তৃতীয় বার শপথ নেওয়ার পর এটিই হতে পারে তাঁর প্রথম বারাণসী সফর।
উল্লেখ্য, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ৮, হরিয়ানায় ৫, রাজস্থানে ১১, পঞ্জাবে ২, মহারাষ্ট্রে ১২—এই পাঁচ রাজ্যে মোট ৩৮টি জেতা আসন হারিয়েছে বিজেপি। মূলত কৃষকদের দাবি না মানা, কৃষক আন্দোলন দমনের চেষ্টা, মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষি, ডেয়ারি মালিক,পশুপালকদের সমস্যা এর অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। লোকসভা ভোটের ফলাফলের পর একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে কৃষক ভোট কমেছে ৩ শতাংশ। পাশাপাশি, সামগ্রিক বিচারে কৃষক ভোট ১৪ শতাংশ বেড়েছে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র। মোদীর দ্বিতীয় দফায় তিন বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে কৃষকদের বিক্ষোভ দেখেছিল গোটা দেশ। ন্যায্য সহায়ক মূল্য-সহ বেশ কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে ওই আন্দোলন থামাতে তিন আইন বাতিল করে কেন্দ্র। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এর প্রভাবই পড়েছে বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে।
সেই আবহেই মনে করা হচ্ছে, কৃষকদের তুষ্ট করতে এ বার একের পর এক পদক্ষেপ করতে পারে বিজেপি। অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে কৃষকদেরই। তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রথম যে ফাইলটিতে সই করেছেন মোদী, সেটি পিএম কিসান নিধি যোজনার। এর মধ্যেই আবার বারাণসীতে মোদীর কৃষক সম্মেলনের খবর তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে দেশের রাজনৈতিক মহল।
বারাণসী কেন্দ্র থেকে এই নিয়ে তৃতীয় বারের জন্য জিতেছেন মোদী। তবে চব্বিশের নির্বাচনে যে ব্যবধানে তিনি উত্তরপ্রদেশের বারাণসী আসনটি জিতেছেন, তা দলের অস্বস্তির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বারাণসী থেকে মোদীর জয়ের ব্যবধান এ বার ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৫১৩টি ভোট। শতাংশের হিসাবে যা ১৩.৪৯ শতাংশ। গত দু’বারের চেয়ে এই ব্যবধান বিপুল পরিমাণে কমেছে। অর্থাৎ, আগের চেয়ে অনেক কম ভোট পেয়েছেন মোদী। ২০১৪ সালে বারাণসী থেকে ৫.৮১ লক্ষ ভোট পেয়েছিলেন মোদী। ব্যবধান ছিল ৩.৭ লক্ষ। ২০১৯ সালে বারাণসীতে মোদীর জয়ের ব্যবধান বৃদ্ধি পায়। তিনি ওই কেন্দ্র থেকে ৬.৭৪ লক্ষ ভোট পেয়েছিলেন। ব্যবধান ছিল ৪.৭৯ লক্ষ। সে বার তাঁর নিকটতম প্রতিপক্ষ ছিলেন সমাজবাদী পার্টির শালিনী যাদব। গত দু’বার প্রায় চার লক্ষ এবং পাঁচ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মোদী। এ বার আর তা হয়নি। গত বারের তুলনায় মোদীর জয়ের ব্যবধান কমেছে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ। পাশাপাশি, বারাণসী কেন্দ্রে ভোট চলাকালীন এক বার অল্প ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছিলেন মোদী। পরে অবশ্য ক্রমশ ব্যবধান বাড়তে থাকে তাঁর। শেষ পর্যন্ত প্রায় দেড় লক্ষ ভোটে জয়ী হন তিনি। সেই বারাণসীকেই কৃষক সম্মেলনের জন্য বেছে নেওয়াও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থানীয় বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন, মোদীর কৃষক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই রোহানিয়া এবং সেবাপুরী বিধানসভা কেন্দ্রে সভাস্থল খোঁজার কাজ চলছে। মোদীর সফরকে কেন্দ্র করে প্রশাসনও একপ্রস্ত বৈঠক সেরেছে বলে জানা গিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজেপির কাশী অঞ্চলের সভাপতি দিলীপ পটেল জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর এক দিনের সফরে দশাশ্বমেধ ঘাটের গঙ্গা আরতিতেও যোগ দেবেন। বারাণসীর সকল বিজেপি কর্মীকে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কৃষক সম্মেলনের জন্য দলীয় কর্মীদের বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও পটেল জানিয়েছেন।