Piyush Goyal

চাষি ও ক্রেতার মন রাখতে পেঁয়াজে ভারসাম্যের নীতি  

পেঁয়াজের দামে লাগাম পরাতে, দেশের বাজারে জোগান অব্যাহত রাখতে দু’দিন আগে মোদী সরকার পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৩ ০৭:০৬
Share:

কেন্দ্রীয় খাদ্য ও ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী পীযূষ গয়াল। ছবি: পিটিআই।

‌টোম্যাটোর পরে পেঁয়াজের দাম বাড়লে ভোটের রাজনীতিতে তার খেসারত দিতে হবে। অন্য দিকে পেঁয়াজের দাম কম রাখতে গিয়ে চাষিরা ঠিক দাম না পেলে তার ক্ষোভও সামলাতে হবে। এই দু’মুখো সমস্যায় পড়ে মোদী সরকার একই সঙ্গে ক্রেতা ও চাষিদের মধ্যে ভারসাম্য রাখার নীতি নিল।

Advertisement

কেন্দ্রীয় খাদ্য ও ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী পীযূষ গয়াল আজ ঘোষণা করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার খোলা বাজারে ২৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বেচবে দাম লাগামের মধ্যে রাখতে। উল্টো দিকে চাষিদের থেকে ২৪১০ টাকা প্রতি কুইন্টাল দরে পেঁয়াজ কিনবে সরকার। এর জন্য যত ভর্তুকি লাগবে, তা কেন্দ্রীয় সরকারের কোষাগার থেকে খরচ করা হবে। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী দফতরের নির্দেশ হল, পাঁচ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা ভোট ও লোকসভা ভোটের আগে কোনও ভাবেই মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়তে দেওয়া চলবে না। কারণ, বিরোধী জোট মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্বকে প্রধান অস্ত্র করে ফেলেছে।

মোদী সরকারের চিন্তা বাড়িয়ে আজ কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকেরই জুলাই মাসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘দেশ এবং বহির্বিশ্বের অনিশ্চয়তার ফলে আগামী কয়েক মাস মূল্যবৃদ্ধির হার চড়া থাকবে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার ও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে সতর্ক থাকতে হবে।’ জুলাই মাসেই খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ৭.৪ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। যা গত ১৫ মাসে সর্বোচ্চ। তার মূল কারণ ছিল খাদ্যশস্য ও আনাজের চড়া দাম। অর্থ মন্ত্রকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, খাবারের চড়া দাম দীর্ঘস্থায়ী হবে না। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে এবং বাজারে নতুন শস্য এলে দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। টোম্যাটোর দাম ২০০ টাকা প্রতি কেজি ছাপিয়ে যাওয়ার পরে এখন দাম কমতে শুরু করেছে। কিন্তু বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। ইতিমধ্যেই তা ৩০ থেকে ৪০ টাকার ঘরে পৌঁছেছে। সেপ্টেম্বরের গোড়াতেই পেঁয়াজের জোগান কমে যাওয়ায় তা ৬০ থেকে ৭০ টাকায় পৌঁছবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মোদী সরকারের সামনে এটা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে পরিবার-পিছু মাসে পাঁচ কেজি করে পেঁয়াজ প্রয়োজন হয়। ফলে বছরে দেড় কোটি টন পেঁয়াজের প্রয়োজন পড়ে।

Advertisement

পেঁয়াজের দামে লাগাম পরাতে, দেশের বাজারে জোগান অব্যাহত রাখতে দু’দিন আগে মোদী সরকার পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিল। তারপরেই মহারাষ্ট্রে চাষিদের মধ্যে বিক্ষোভ শুরু হয়। নাশিক জেলার লাসলগাঁওতে দেশের বৃহত্তম পাইকারি পেঁয়াজ বাজারে নিলাম বন্ধ হয়ে যায়। চাষিদের ক্ষোভের কারণ, তাঁরা পেঁয়াজের ভাল দাম পেতে শুরু করতেই মোদী সরকার রফতানি শুল্ক চাপিয়ে বিদেশে পেঁয়াজ রফতানিতে লাগাম টেনেছে। ফলে চাষিদের সামনে ভাল দাম মেলার সুযোগ কমেছে।

চাষিদের ক্ষোভের মুখে মহারাষ্ট্রের একনাথ শিন্দের শিবসেনা ও বিজেপির জোট সরকার চাপে পড়ে গিয়েছে। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী ধনঞ্জয় মুণ্ডে দিল্লিতে এসে কেন্দ্রের খাদ্য, ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিজেপি নেতা, রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস এখন জাপানে। তিনি সেখান থেকে অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলেন। তার পরেই গয়াল ঘোষণা করেন, সরকার ২৪১০ টাকা প্রতি কুইন্টাল দরে পেঁয়াজ কিনবে। চাষিদের চিন্তার কারণ নেই। গত কয়েক দিনে নাশিক, লাসলগাঁও, আহমেদনগর থেকে ৩ লক্ষ টন পেঁয়াজ কেনা হয়েছে। দেশের বাজারে যাতে যথেষ্ট পেঁয়াজ থাকে, তার জন্যই রফতানিতে রাশ টানা হয়েছে। চাষিরা যাতে পেঁয়াজের উপযুক্ত দাম পান, তার জন্য মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশের চাষিদের থেকেও পেঁয়াজ কেনা হবে। পেঁয়াজ রফতানি করে প্রতি কুইন্টালে ৩২০ ডলার মিলছিল। যার অর্থ চাষিরা প্রতি কেজিতে ১৮ থেকে ২০ টাকা পাচ্ছিলেন। সরকার তার থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনছে।

আজ অর্থ মন্ত্রকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মূলত খাদ্যপণ্যের দামই মূল্যবৃদ্ধির হারকে ঠেলে তুলছে। নয়তো খাদ্য ও জ্বালানি বাদে অবশিষ্ট অংশের মূল্যবৃদ্ধির হার এখন ৪.৯%। বাজারে নতুন টোম্যাটো, অড়হর ডাল এলে আনাজপাতির দাম কমবে। তবে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের অভিযোগ, মোদী সরকারের জনবিরোধী নীতির ফলে আনাজ, আটা, চাল, ডাল-সহ সমস্ত খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। গত দেড় মাসে খাবারের থালার দাম ২৮ শতাংশ বেড়েছে। একদিকে মূল্যবৃদ্ধি বাড়ছে, অন্য দিকে কৃষক ফসলের ঠিক দাম পাচ্ছেন না। চাষিরা কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু সেই ফসল পুঁজিপতিদের গুদামে পৌঁছলেই তার দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমজনতা বুঝে গিয়েছে এই সরকারের একমাত্র লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাবমূর্তি রক্ষা করা ও তাঁর শিল্পপতি বন্ধুদের ফায়দা পাইয়ে দেওয়া।

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অর্থ মন্ত্রকের রিপোর্টেও কিছু উদ্বেগের কথা রয়েছে। কর্নাটকের কোলার জেলায় ফসলের হোয়াইট ফ্লাই রোগ থেকে টোম্যাটোর সমস্যা শুরু। সেই সঙ্গে উত্তর ভারতে দ্রুত বর্ষা চলে আসার ফলে টোম্যাটোর উৎপাদন বিপর্যস্ত হয়। অড়হর ডালের উৎপাদনও ধাক্কা খেয়েছে। অন্য দিকে, গত মাসে কৃষ্ণ সাগরের মাধ্যমে খাদ্যপণ্য পরিবহণ চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে রাশিয়া। বলা হয়েছে, এর ফলে সারা বিশ্বের পাশাপাশি ভারতেও মূল্যবৃদ্ধির চাপ বজায় থাকবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement