.
বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রার উপর সরকারি নজরদারি আদৌ হয় কি? হলে কী ভাবে? এই প্রশ্ন তুলে এ বার কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হল জনস্বার্থ মামলা। গত কাল বৃহস্পতিবার ওই মামলা দায়ের করেন সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়।
বছরখানেক ধরেই নগদহীন বিনিময়ের উপর জোর দিয়েছে মোদী সরকার। নোটবন্দির পর পেটিএম-এর মতো বিভিন্ন অ্যাপ নির্ভর বিনিময় পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়েছে। ‘প্ল্যাস্টিক মানি’কে আরও জনপ্রিয় করার চেষ্টা হয়েছে নগদের পরিবর্তে। এর পাশাপাশি বাজারে ঘুরছে আরও এক মুদ্রা— ক্রিপ্টোকারেন্সি। বিটকয়েন-সহ আরও কিছু ‘মুদ্রা’ সেই গোত্রেই পড়ে। কিন্তু, এই ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর নজরদারির কোনও ব্যবস্থাই নাকি নেই সরকারের।
এই ‘কারেন্সি’ আদৌ কি বৈধ? যদি বৈধ হয়, তবে তা দেখভাল করে কোন সরকারি সংস্থা? আর যদি গোটাটাই অবৈধ হয়, তবে তা রোধ বা নিয়ন্ত্রণই বা করবে কোন সংস্থা? সরকারি নির্দেশিকাই বা স্পষ্ট ভাবে ঠিক কী? এ সব প্রশ্ন তুলেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বিভাসবাবু। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই), এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি), সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি), কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রককে পক্ষ করে এই জনস্বার্থ মামলাটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন
মোদীর সংস্কারে কুপোকাত বৃদ্ধি
বিশেষজ্ঞ ওই আইনজীবী জানিয়েছেন, বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন এ দেশে বিপুল হারে বেড়ে গিয়েছে। এবং গোটাটাই গোপনে। সরকারের কোনও নজরদারি এ ক্ষেত্রে একেবারেই নেই। শুধু তাই নয়, সুস্পষ্ট কোনও নির্দেশিকাও নেই। বিভাসবাবু বলেন, ‘‘২০১৬-র শেষ দিকে বিটকয়েনের দাম ছিল প্রায় ৬০ হাজার টাকা। আজকের দিনে তার দাম ৯ লাখ ২২ হাজার! এক বছরে কত শতাংশ দাম বেড়েছে ভেবে অবাক হতে হয়।’’ বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দাম কয়েক বছরের মধ্যে এক কোটি ছুঁয়ে ফেলবে। বিশ্ব বাজারের যত বিটকয়েন কেনাবেচা হয়, তার ১১ শতাংশ ভারতে হয় বলে তাঁদের দাবি। এই কেনাবেচার একটা অংশ কলকাতা-সহ এই পশ্চিমবাংলাতেও হয়। অনলাইন ওই কেনাবেচার হিসেব বলছে, কলকাতায় ইদানীং খুল্লামখুল্লা বিটকয়েন বিক্রি হচ্ছে। সাইবার অপরাধে লেনদেন এখন নাকি মূলত এই ক্রিপ্টোকারেন্সিতেই হয়।
আরও পড়ুন
গ্রাহকের টাকা মার যাবে না ব্যাঙ্কে
কিন্তু আরবিআই তো আগেই জানিয়েছিল, বিটকয়েনের মতো লেনদেন এ দেশে অবৈধ। বিভাসবাবু জানালেন, গত কয়েক বছরে শীর্ষ ব্যাঙ্ক তিন বার এ বিষয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করছে। তাতে নাগরিকদের সতর্ক করা হয়েছে এই বলে যে, বিটকয়েনের লেনদেন অবৈধ। এর বেশি কিছু নয়। আর সেখান থেকেই অনেক প্রশ্ন উঠছে। ওই মুদ্রা কেনাবেচা করলে তার শাস্তি কী? ওই লেনদেন করলে, তা সরকারি কোন সংস্থা তদন্ত করে দেখবে? এমনকী, অবৈধ ওই লেনদেন করা আদৌ হচ্ছে কি না, তার নজরদারিও বা করবে কে? এ সব প্রশ্ন তুলেই মামলাটি করা হয়েছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাবেচা হচ্ছে হোয়াট্অ্যাপের মতো ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড’ সিকিউরিটিওয়ালা বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে। বিভাসবাবুর প্রশ্ন, সরকারি এই দাবি যদি সত্যি হয়, তবে অপরাধ প্রমাণের ক্ষেত্রে কী ভাবে ওই কোডকে ‘ডিকোড’ করা হবে? এ সব জানতে চেয়েই মামলাটি করা হয়েছে।