মামলাকারী শিক্ষিকার আবেদন খারিজ করল আদালত। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
পড়াশোনা শেখানোর নামে বা অনুশাসনের নামে স্কুলে পড়ুয়াদের মারধর নিষ্ঠুরতা ছাড়া আর কিছু নয়। এক মামলার পর্যবেক্ষণে সম্প্রতি এ কথা জানাল ছত্তীসগঢ় হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। এক পড়ুয়াকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছিল ছত্তীসগঢ়ের অম্বিকাপুরের এক স্কুল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। সেই এফআইআর খারিজের আর্জি নিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শিক্ষিকা। তবে অভিযুক্ত শিক্ষিকার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে ছত্তীসগঢ় হাই কোর্ট।
ঘটনাটি ঘটেছিল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছিল স্কুল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। চার্জশিটও গঠন করেছিল পুলিশ। এর পর শিক্ষিকা সেই এফআইআর ও চার্জশিট খারিজের আবেদন জানিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। মামলা ওঠে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি রমেশ সিংহ ও বিচারপতি রবীন্দ্রকুমার আগরওয়ালের ডিভিশন বেঞ্চে।
অভিযুক্ত শিক্ষিকার আবেদন খারিজ করে নির্দেশনামায় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, “কোনও শিশুর উপর শারীরিক পীড়াদায়ক কোনও শাস্তি চাপানো সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে বর্ণিত বেঁচে থাকার অধিকারের পরিপন্থী। বৃহত্তর অর্থে বেঁচে থাকার অধিকার বলতে বোঝায় এমন সব কিছু যা কাউকে বেঁচে থাকার প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করতে সাহায্য করে এবং বেঁচে থাকার জন্য জীবনকে পরিপূর্ণ করে তোলে। অর্থাৎ, শুধু মাত্র বেঁচে থাকতে হবে বলে বেঁচে থাকার চেয়েও যা বেশি কিছু। সম্মানজনক ভাবে জীবন যাপন করাও বেঁচে থাকার অধিকারের মধ্যে পড়ে।”
আদালত আরও জানিয়েছে, “কেবল মাত্র ছোট বলে, একজন শিশুর ক্ষেত্রে এই অধিকার একজন প্রাপ্ত বয়স্কের থেকে কম কিছু নয়। পড়াশোনার নামে বা অনুশাসনের নামে স্কুলে কোনও শিশুকে শারীরিক সাজা দেওয়া নিষ্ঠুরতার শামিল। শিশুরা দেশের সম্পদ। নিষ্ঠুরতা নয়, বরং কোমলতা ও যত্নের সঙ্গে তাদের দেখতে হবে। কোনও শিশুর উপর শারীরিক পীড়নমূলক শাস্তি কখনোই শিক্ষার অঙ্গ হতে পারে না।”
উল্লেখ্য, ওই ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর মৃত্যুর পর পুলিশ একটি ‘সুইসাইড নোট’ উদ্ধার করেছিল, যেখানে শিক্ষিকার নাম উল্লেখ ছিল। শিক্ষিকার আইনজীবীর দাবি, ঘটনার দিন সে রকম কিছুই হয়নি। আদালতে তিনি জানান, ওই শিক্ষিকা কেবল মাত্র ছাত্রীকে সতর্ক করেছিলেন এবং তার স্কুলের পরিচয়পত্র নিয়ে নিয়ে নিয়েছিলেন শিক্ষিকা। আইনজীবীর দাবি, ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না তাঁর মক্কেলের। কোনও রকম প্রাথমিক অনুসন্ধান ছাড়া, শুধুমাত্র ওই ‘সুইসাইড নোটে’ নাম থাকার কারণেই পুলিশ তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে বলে দাবি শিক্ষিকার আইনজীবীর।
যদিও সরকারি আইনজীবী এফআইআর খারিজের আবেদনের বিরোধিতা করেন। তাঁর পাল্টা যুক্তি, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা অনুসারে মৃত ছাত্রীর সহপাঠীদের বয়ান সংগ্রহ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, শিক্ষিকার আচরণ এতটাই ঝাঁঝাল যে পড়ুয়ারা মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে থাকত। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে এফআইআর খারিজের আবেদন নাকচ করে দেয়।