ছবি: রয়টার্স
আমেরিকার টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা ফাইজার এ বার ভারতে জরুরি ভিত্তিতে তাদের তৈরি করোনা-টিকা অনুমোদনের জন্য আবেদন করল ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া বা ডিসিজিআই-এর কাছে। সম্প্রতি সাধারণের ব্যবহারের জন্য ব্রিটেন এবং বাহরাইনে ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি প্রতিষেধক জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্র পেয়েছে। সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, ভারতেও সেই টিকার ছাড়পত্র পেতে ডিজিসিআই-এর কাছে আবেদন জানিয়েছে ওই সংস্থা।
সরকারি ওই সূত্র বলছে, ৪ ডিসেম্বর ফাইজার অনুমতিপত্রে লিখেছে, ‘ভারতে ওই টিকা বিদেশ থেকে আমদানি করে অবিলম্বে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হোক। ২০১৯-এর নিউ ড্রাগস অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস আইন অনুযায়ী ভারতীয়দের উপর এই টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের উপর ছাড় দেওয়া হোক’।
বুধবারই ব্রিটেনে এই টিকা ছাড়পত্র পেয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের তরফে জানানো হয়, আগামী সপ্তাহ থেকে ব্রিটেন জুড়ে টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু করা হবে। তবে এই কর্মসূচি হবে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে। প্রথমে একমাত্র ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদেরই টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বরিস জনসন সরকার। ব্রিটেন ইতিমধ্যেই ২ কোটি মানুষের টিকাকরণের জন্য ওই সংস্থাকে ৪ কোটি ডোজের বরাত দিয়েছে। প্রত্যেককে দু’টি ডোজে টিকা দেওয়া হবে বলে সরকারি সূত্রে খবর। এ ছাড়া, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আরও ১ কোটি ডোজ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে সে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রক। শনিবার বাহরাইনও সেই পথে হেঁটেছে। ফাইজার জানিয়েছে, ব্রিটেনে টিকা বণ্টনের জন্য তারা প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: মোট আক্রান্তের ৯৪ শতাংশই সুস্থ, এক দিনে আক্রান্ত ৩৬ হাজার ১১, দেশে ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৪৮২
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা কোনও রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কার্যকর। অতিসঙ্কটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে এই টিকা আনুমানিক ১০০ শতাংশ কাজ করে বলেও দাবি ওই সংস্থার। সূত্রের খবর, ডিজিসিআই চাইলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ছাড়াই এই টিকাকে ছাড়পত্র দিতে পারে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘‘তিনটি পৃথক টিকা ট্রায়ালের ফাইনাল স্তরে রয়েছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই টিকা তৈরি হয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক সব সংস্থার সঙ্গে ভারতীয় সংস্থা এ বিষয়ে একযোগে কাজ করছে। টিকা এলেই যাতে বণ্টন করা যায়, তার জন্য আমরা প্রস্তুত।’’
আরও পড়ুন: করোনা টিকা আমদানি-রফতানির জন্য তৈরি হায়দরাবাদ, দিল্লি বিমানবন্দর
ফাইজারের তৈরি টিকা বেশি কার্যকর হলেও এই টিকা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন বিশেষ ব্যবস্থা। এই টিকা সংরক্ষণ করতে হয় হিমাঙ্কের ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে। অন্য যে টিকাগুলোর ট্রায়াল চলছে ভারতে, তা হিমাঙ্কের নীচে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করতে হয়।
গবেষকদের মতে, ফাইজার-বায়োএনটেকের এই টিকা এক ধরনের এমআরএনএ জাতীয় ভ্যাকসিন। তাঁরা জানিয়েছেন, ভাইরাসের জেনেটিক কোড থেকে ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম এই টিকা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) আগেই জানিয়েছিল, ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনের প্রতি ডোজের জন্য ১০ ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে সাতশো টাকা খরচ হবে।