শেষমেশ, চাপে পড়ে কিছুটা হলেও পিছু হঠতেই হল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে।
সরকারি ভাবে জানানো হল, প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে তোলা টাকার ওপর আয়কর দিতে হবে না। প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা রাখলে আমি-আপনি যে সুদটা পাই, তা যেহেতু আয়ের একটি উৎস, তাই তার একটা অংশের ওপর এ বার আয়কর দিতে হবে।
বিষয়টা আরও একটু সহজ করে বুঝে নেওয়া যাক। ধরুন, আমি-আপনি অবসর পর্যন্ত ইপিএফ বা এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডে ১০০ টাকা জমিয়েছি। এর মধ্যে ৫০ টাকা জমেছে ৩১ মার্চ, ২০১৬ পর্যন্ত। বাকি ৫০ টাকা জমেছে ২০১৬-র এপ্রিল থেকে অবসর পর্যন্ত। প্রথম ধাপের ৫০ টাকা বা তার ওপর আমি-আপনি যে সুদ পাচ্ছি, তা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। তার ওপর কোনও আয়কর বসছে না। পরের ধাপের ৫০ টাকার ৪০ শতাংশ বা ২০ টাকার ওপরেও বসছে না কোনও আয়কর। কিন্তু বাকি ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ৩০ টাকা তুলতে গেলে তার ওপর আয়কর দিতে হবে আমাকে-আপনাকে। কারণ, ওই পরিমাণ অর্থকে আমার-আপনার আয় বলেই ধরা হবে। ৩০ টাকাটা বাস্তবে ৩০ লক্ষ টাকা হলে, সেই আয়করের পরিমাণটা হবে ৯ লক্ষ টাকা। যদি না সেই টাকায় অ্যানুইটি কেনা হয়। এটা ছিল বাজেটের প্রস্তাব। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের তরফে যেটুকু ইঙ্গিত মিলেছে, তা হল- ওই পরের ধাপে জমানো টাকার ৬০ শতাংশের ওপরেও কোনও আয়কর আমাকে-আপনাকে দিতে হবে না। শুধুমাত্র ওই পরিমাণ টাকার ওপর যে সুদ দেওয়া হচ্ছে, তার ওপরেই আয়কর বসানো হতে পারে। বছরে ইপিএফ-এ জমার ওপরে কর-ছাড়ের যে ঊর্ধ্বসীমা ছিল, সেটাও তুলে দেওয়া হতে পারে। তবে সেটাও চূড়ান্ত হয়নি। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাজেট প্রস্তাবে প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়ে ঘোষণা দেশজুড়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ বিপদে-আপদে কেন তাঁদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা তুলতে চাইলেও, তার অর্ধেকেরও বেশি অংশের ওপর আয়কর দিতে বাধ্য হবেন, তা নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। গত কাল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির এই ঘোষণা প্রভিডেন্ট ফান্ডের আওতায় থাকা দেশের প্রায় সাড়ে ছয় কোটি সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীকে রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে। চাকরিজীবীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সামনে বেশ কয়েকটি রাজ্যে ভোট। বাজেট প্রস্তাবের এই ঘোষণা ওই রাজ্যগুলিতে বিজেপি-কে অনিবার্য ভাবেই বেকায়দায় ফেলে দেবে। সেটা সম্ভবত একটু দেরিতে বুঝতে পেরেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তাই প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়ে বাজেট প্রস্তাবে ‘বৈপ্লবিক’ ঘোষণার পরের দিন, তাঁকে দৃশ্যতই, কিছুটা পিছু হটতে হল।দেশজুড়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে। অনেকটাই ভোটের বাধ্যবাধকতায়!
মঙ্গলবার সকালেই টুইট করে অর্থ মন্ত্রকের তরফে রাষ্ট্রমন্ত্রী জয়ন্ত সিনহাকে জানাতে হয়, ‘‘বিষয়টি নিয়ে দেশ গভীর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ায় আমরা ঠিক করেছি, খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে সবিস্তারে জানানো হবে। মানুষকে সহজ করে বিষয়টা বোঝানোর জন্য।’’ কথায় কিছুটা ফাঁক রেখে কেন্দ্রীয় রাজস্ব সচিব হাসমুখ আধিয়া বলেছেন, ‘‘পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ) থেকে টাকা তোলা হলে তার কোনও অংশের ওপরেই আয়কর দিতে হবে না।’’ কিন্তু, ইপিএফ বা এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে টাকা তোলা হলে কী হবে, তা নিয়ে এ দিন সকালে খুব স্পষ্ট কিছু বলেননি রাজস্ব সচিব।
আরও পড়ুন- এ বার পিএফের টাকা তুললেও দিতে হবে আয়কর!
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের এক পদস্থ কর্তা অবশ্য বলেছেন আদত কথাটাই। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সব কিছুই এখন প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে।’’