আইন সংশোধন করে এ বার পাঁচ হাজার ও দশ হাজার টাকা জরিমানার বন্দোবস্ত হবে। ফাইল চিত্র।
এসপ্ল্যানেড থেকে শ্যামবাজার যাবেন। ১৫ টাকার বদলে ভুল করে ১০ টাকার টিকিট কেটে ফেললেন। এত দিন এমন কারণে এক মাস জেল হতে পারত। বিশ বছরের পুরনো মেট্রো রেলের আইন সংশোধন করে কেন্দ্রীয় সরকার এ বার শুধু জরিমানা আদায় করেই ছেড়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে চাইছে। এই ‘অপরাধের’ জন্য আর জেল খাটতে হবে না।
মেট্রো রেলের ছাদে উঠে পড়লে বা যাতায়াতের সময় বাইরে হাত-পা বের করার চেষ্টা করলে এত দিন ৫০ টাকা আইনের সঙ্গে এক মাসের জেলের শাস্তি বাঁধা ছিল। অকারণে ‘অ্যালার্ম বেল’ বাজালেও এত দিন এক হাজার টাকা জরিমানার সঙ্গে এক বছর জেল খাটার শাস্তি ছিল। আইন সংশোধন করে এ বার পাঁচ হাজার ও দশ হাজার টাকা জরিমানার বন্দোবস্ত হবে। এর জন্য জেল খাটতে হবে না। তবে মেট্রোর কামরার ছাদে কী করে ওঠা যায় বা এসি কামরা থেকে কী ভাবে হাত-পা বাইরে বার করা যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। এত দিন ট্রেনে বা রেল স্টেশনে ভিক্ষা করলেও আইন অনুযায়ী পুলিশ ডেকে শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। রেলের আইনে এ বার বলা হবে, ভিক্ষা করার অনুমতি নেই। কিন্তু তার জন্য পুলিশের ডাক পড়বে না।
মোদী সরকার সংসদের চলতি অধিবেশনে জন বিশ্বাস বিল পেশ করেছে। তাতে ৪২টি আইনে সংশোধন করতে চাইছে সরকার। এই সব আইনে নানা ছোটখাটো অপরাধে কারাদণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। সরকার চাইছে, সামান্য অপরাধে জেল খাটার শাস্তি তুলে দিয়ে শুধুমাত্র জরিমানার শাস্তি রাখতে। তাতে মামলা-মোকদ্দমার পাহাড় কমবে। জীবনযাত্রাও সহজ হবে। আপাতত এই বিল লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদদের নিয়ে তৈরি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে আলোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, মানুষের উপর বিশ্বাস রেখেই সামান্য অপরাধে জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। ৪২টি আইনের ১৮৩টি ধারায় সংশোধন করা হচ্ছে।
যেমন, রেস্তরাঁ বা ফুটপাথের দোকানের খাবার প্রায়ই পরীক্ষা করে দেখা যায়, তা খেলে শরীর খারাপ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে রেস্তরাঁর মালিককে এক লক্ষ টাকা জরিমানার সঙ্গে ছয় মাস পর্যন্ত জেলে পোরারও ব্যবস্থা ছিল আইনে। সেই সঙ্গে খাবারদাবার সম্পর্কে ভুল মিথ্যে প্রচার করলেও তিন মাস জেল খাটার শাস্তি ছিল। কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে, এ ক্ষেত্রে তিন লক্ষ টাকা থেকে দশ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হোক। কিন্তু জেল খাটার শাস্তি বাদ যাক।
মেট্রো রেল বা খাদ্যের মান সংক্রান্ত আইন অবশ্য হাল আমলের। ব্রিটিশ জমানার ডাকঘর আইনে বলা ছিল, কোনও পিওন মত্ত অবস্থায় চিঠি বিলি করলে তাঁর পঞ্চাশ টাকা জরিমানা হবে। রেজিস্ট্রি চিঠি বিলি না করেই সই জাল করে চিঠি বিলি হয়ে গিয়েছে বলে দেখালে পিওনের ছয় মাসের জেল, কারও চিঠি খুললে দু’বছরের জেল, চিঠি নষ্ট করলে সাত বছর পর্যন্ত জেলের শাস্তি ছিল। এই গোটা ধারাটাই তুলে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, পিওন কাজে গাফিলতি করলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা হতে পারে। তার জন্য পুলিশ-আদালত করার প্রয়োজন নেই।