অনামিকা ভুঁইয়া ও সমৃদ্ধি ভট্টাচার্য
আনন্দ, উত্তেজনার রেশ কাটেনি তখনও। সঙ্গে মৃদু আক্ষেপও। সোমবার তালকাটোরা স্টেডিয়ামে ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ শেষে সমৃদ্ধি ভট্টাচার্য জানাল, ‘‘এমন মঞ্চে গান গেয়ে ভাল অবশ্যই লেগেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হল না একটুর জন্য। আফশোস তো হবেই।’’
ঘোর কাটতে চাইছে না হুগলির অনামিকা ভুঁইয়ারও। প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা মারফত বাছাই হয়ে এসে প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছিল তিনি। অনুষ্ঠান শেষে বলল, ‘‘টেনশন ছিল। কিন্তু একই সঙ্গে নিজেকে বলেছিলাম, এমন সুযোগ পান ক’জন? ভাল লাগছে।’’
কলকাতা বিমানবন্দরের কাছে বাড়ি দশম শ্রেণির সমৃদ্ধির। আর একাদশের অনামিকার হুগলিতে। প্রথম জন কেভিএস-২ স্কুলের ছাত্রী। দ্বিতীয় জনকে এ দিন সঙ্গে করে এনেছিলেন জেএনভি-হুগলি স্কুলের শিক্ষিকা শর্মিলা ঝা। সমৃদ্ধি অনুষ্ঠান শুরুর আগে একাধিক গানে মঞ্চ মাতিয়েছে। আর দ্বিতীয় জন জিজ্ঞাসা করেছে, ‘‘পড়াশোনা আর তার বাইরের পছন্দের (এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ) মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা যায় কী ভাবে?’’
সমৃদ্ধি দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে গান শিখছে। তালিম নিয়েছে বাবার কাছে। এর আগে বেশ কিছু সিরিয়াল, অনুষ্ঠানে গাইলেও এ দিন স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক, টিভি-সোশ্যাল মিডিয়ায় ২৫টি দেশের শ্রোতার সামনে মঞ্চে গাইতে ওঠার আগে কাঁপুনি কিছুটা ছিল। কিন্তু গাইতে শুরু করার পরে তা আর মনে থাকেনি। তেমনই অনামিকা জানাল, ভবিষ্যতে এরোনটিক্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছে। কিন্তু আগে মন দিতে চায় সামনের পরীক্ষায়।
আসলে এ দিন কার্যত মিনিট কয়েকের মধ্যে ‘তারকা’ বনে গিয়েছিল এই সমস্ত পড়ুয়ারা। প্রধানমন্ত্রী স্টেডিয়াম ছাড়ার পরেই তাদের কখনও ঘিরে ধরছে টিভি ক্যামেরা, কখনও পরিচয় করতে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন বয়স্ক অপরিচিতরাও। যেন কিছুটা নিজেকে চিমটি কেটে দেখার মতো অবস্থা।
এরই মধ্যে অনুষ্ঠানের দুই সঞ্চালিকা, ছত্তীসগঢ়ের শ্রেয়া সিংহ আর বেঙ্গালুরুর হৃদয়া এস নায়ার বলল, খোদ প্রধানমন্ত্রী এমন দরাজ প্রশংসা করবেন, তা স্বপ্নেও ভাবেননি তাঁরা। প্রথম জনের স্বপ্ন, দেশের প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি হওয়ার। দ্বিতীয় জনের পাখির চোখ আইএফএস। ঘোর কাটছে না রাঁচী থেকে আসা তৃতীয় সঞ্চালক সাহিল কুমারেরও। জম্মু থেকে আসা করিশ্মা রায়না, লাদাখের স্টিনজিন নরবু থেকে শুরু করে প্রায় সমস্ত অংশগ্রহণকারীরই কার্যত একই দশা।
অনেকেই বলল, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ মেনে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করবে তারা। কিন্তু তাতে আশ্বস্ত দেখাল না সঙ্গী অনেক শিক্ষক এবং অভিভাবককেই। দিনের শেষে কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের কটাক্ষ, এ সব অনুষ্ঠান করে বোর্ডের পরীক্ষার্থীদের সময়ই নষ্ট করছেন মোদী।